Bangla Golpo লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Bangla Golpo লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

36 antibiotics ineffective in the country 26 thousand

 


 36 Antibiotics Ineffective 


দেশে ৩৬টি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর ২৬ হাজার :-

একটি স্বাস্থ্য সংকটের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়া একটি জাতিতে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কঠোর বাস্তবতা একটি ভয়ঙ্কর শত্রু হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, একটি বিস্ময়কর 36 টি অ্যান্টিবায়োটিককে সাধারণ সংক্রমণের বিরুদ্ধে অকার্যকর করে তুলেছে। এই উদ্বেগজনক প্রবণতা একটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে: এক বছরের ব্যবধানে 26 হাজার প্রাণ হারিয়েছে।

একসময় চিকিৎসা বিস্ময় হিসাবে স্বীকৃত, অ্যান্টিবায়োটিকগুলি এখন তাদের নিজস্ব সাফল্যের শিকার হয়ে উঠেছে, কারণ ব্যাপক অপব্যবহার এবং অত্যধিক ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধী স্ট্রেনের উত্থানকে উস্কে দিয়েছে। এই বিপর্যস্ত জাতিতে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের পরিণতিগুলি একটি জটিল সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে, একসময় কার্যকর ওষুধের আধিক্য এখন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে পুরুষত্বহীন হয়ে পড়েছে।

এই সংকটের প্রভাব বহুগুণে ছড়িয়ে পড়েছে, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলিতে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা নিজেদেরকে সীমিত চিকিত্সার বিকল্পগুলির সাথে লড়াই করতে দেখেন, কারণ একবার সহজেই নির্মূল করা সংক্রমণগুলি আক্রমনাত্মক হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও টিকে থাকে। একসময় অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া রোগীরা এখন দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং বর্ধিত মৃত্যুর হারের মুখোমুখি, কারণ একবার চিকিত্সাযোগ্য সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার সীমানা ছাড়িয়ে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের লহরী প্রভাব সমগ্র সম্প্রদায় জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। কৃষিতে, প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারকে বাড়িয়ে তুলেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রদায়গুলিতে, প্রতিরোধী সংক্রমণের বিস্তার সামাজিক কাঠামোকে চাপ দেয়, পরিবারের উপর অকথ্য বোঝা চাপিয়ে দেয় এবং ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত বোঝা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে চাপ দেয়।

এই ভয়ঙ্কর মূকনাটকের মধ্যে, জরুরী পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয়তা কখনই পরিষ্কার ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা অবশ্যই বহুমুখী এবং ব্যাপক হতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই বিস্তৃত। প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার নিরীক্ষণ করতে এবং প্রতিরোধের উদীয়মান হটস্পট চিহ্নিত করার জন্য শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার প্রচারের জন্য শিক্ষা প্রচারাভিযান চালু করতে হবে, দায়িত্বশীল স্টুয়ার্ডশিপের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তদ্ব্যতীত, গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ অভিনব অ্যান্টিবায়োটিক এবং বিকল্প চিকিত্সা পদ্ধতির বিকাশের জন্য সর্বোত্তম। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য অবশ্যই প্রণোদনা প্রদান করতে হবে, প্রতিরোধী প্যাথোজেনগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টদের অনুসরণকে উৎসাহিত করতে হবে। উপরন্তু, কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিকের বিচক্ষণ ব্যবহারকে উন্নীত করার কৌশলগুলি অবশ্যই বাস্তবায়িত করতে হবে, যা খামার থেকে কাঁটা পর্যন্ত প্রতিরোধের বিস্তারকে হ্রাস করবে।

সর্বোপরি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার দাবি, জাতীয় সীমানা এবং রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে। এই ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডেটা, সংস্থান এবং দক্ষতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতামূলক উদ্যোগগুলি তৈরি করতে হবে। শুধুমাত্র সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই আমরা আশা করতে পারি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের জোয়ার রোধ করতে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও মঙ্গল রক্ষা করতে।

ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখে, পদক্ষেপের সময় এখন। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বর্ণালী বিশাল আকার ধারণ করে, আধুনিক চিকিৎসার ভবিষ্যৎকে ছায়া ফেলে। তবুও, সংকল্প এবং দৃঢ় সংকল্পের সাথে, আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উঠতে পারি, এমন একটি বিশ্বের দিকে একটি পথ তৈরি করতে যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি একটি বিগত যুগের ধ্বংসাবশেষের পরিবর্তে চিকিৎসা অনুশীলনের মূল ভিত্তি হয়ে থাকে।

রস খাওয়া drink juice சாறு குடிக்க रस पीजिए Golpo 2024


🌴 রস খাওয়া 🌴

বিলের ধারে ছোট ঝোপ। সেখানে এক হাঁস থাকে। হাঁস একাই থাকে। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। 
সারাদিন বিলে সাঁতার কাটে। মাছ ধরে খায়। শামুক খায়। শ্যাওলা খায়। সূর্য ডুবলে বাড়ি ফেরে।
একদিন এক মুরগি এল হাঁসের সাথে আলাপ করতে। সাথে ছোট-বড় মিলে আটটি ছানাপোনা।
এখন শীতকাল। খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বাঁধা। ছোট ছানাটির শখ খেজুর রস খাবে। রসের হাঁড়ি তো উঁচুতে বাঁধা। এত উঁচুতে উঠবে কীভাবে। ছোট ছানাটির কান্না থামে না। মুরগি হাঁসকে বলল, 'ভাই, কী করি? গাছে উঠে হাঁড়ি তো নামানো যাবে না।

হাঁস বলল, 'উপায় আছে। আমার গায়ে খুব জোর। আমি সবার নিচে থাকব। তোমরা আমার পিঠে চড়বে। একজনের ওপর আর একজন। খেজুর গাছের নিচে হাঁসের পিঠে সবাই চড়ল। ছোট ছানাটি সবার ওপরে। প্রায় হাঁড়ির কাছে । এক কাক এ দিক দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। 
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে বড় এক পাখি । এমন পাখি তো আগে কখনো দেখিনি। নিচে হাঁস, ওপরে মুরগি। তাও আবার গাছের সমান ।ভয়ে কাক কা-কা করে উঠল। কাকের চিৎকার শুনে হাঁস পেল ভয়। দিল জোরে দৌড়। ওলটপালট খেয়ে একজনের ওপর আর একজন গেল পড়ে। রস আর খাওয়া হল না।
রস খাওয়ার আশা থেকে গেল ।

रस पीजिए 🌴

बिल के किनारे एक छोटी झाड़ी. वहां एक बत्तख रहती है. बत्तख अकेली रहती है।
वह सुबह घर से निकला था. सारा दिन बिल में तैरता है। मछली पकड़ता है और खाता है.
घोंघे खाता है शैवाल खाता है सूरज डूबने पर घर लौट आता है। एक दिन एक मुर्गी बत्तख से बात करने आई।
साथ में छोटे-बड़े आठ चूज़े भी। अभी सर्दी है. ताड़ के पेड़ों से बंधे रस निकालने के बर्तन।
छोटा चूजा ताड़ का रस खाना पसंद करता है। जूस का बर्तन ऊंचा बंधा हुआ है. इतना ऊपर कैसे पहुंचें.
छोटा चूजा रोना बंद नहीं कर रहा।

मुर्गे ने बत्तख से कहा, 'भाई, मैं क्या करूँ? गमलों को पेड़ों से नीचे नहीं उतारा जा सकता।
बत्तख ने कहा, 'एक रास्ता है। मेरे लिए बहुत मजबूत. मैं सबसे नीचे रहूँगा. तुम मेरी पीठ पर सवार होओगे.
एक के ऊपर एक. सभी लोग ताड़ के पेड़ों के नीचे बत्तखों पर सवार हुए।
छोटा चूजा सबके ऊपर है। लगभग बर्तन के पास. एक कौवा इसी दिशा में उड़ रहा था।
नीचे देखें और एक बड़ा पक्षी देखें। मैंने ऐसा पक्षी पहले कभी नहीं देखा। बत्तख नीचे, मुर्गी ऊपर।
यह भी एक वृक्ष के समान ही है। कौआ डर कर काँव-काँव करने लगा। कौवे की चीख सुनकर बत्तख डर गई।
दिल खूब दौड़ा. एक दूसरे के ऊपर गिर गया. अब जूस नहीं पिया गया. जूस खाने की आस बनी रही.

🌴 சாறு குடிக்க

உண்டியலில் ஒரு சிறிய புதர். அங்கே ஒரு வாத்து வாழ்கிறது. வாத்து தனியாக வாழ்கிறது. காலையில் வீட்டில் இருந்து புறப்பட்டார். நாள் முழுவதும் உண்டியலில் நீந்துகிறது. மீன் பிடித்து சாப்பிடுகிறது.
நத்தைகளை சாப்பிடுகிறது பாசிகளை சாப்பிடுகிறது சூரியன் மறையும் போது வீட்டிற்கு திரும்பவும். ஒரு நாள் கோழி ஒன்று வாத்திடம் பேச வந்தது.
பெரிய மற்றும் சிறிய எட்டு குஞ்சுகளுடன். இப்போது குளிர்காலம். பனை மரங்களில் கட்டப்பட்ட சாறு பானைகள்.

சிறு குஞ்சு பனை சாறு சாப்பிட விரும்புகிறது. ஜூஸ் பானை உயரமாக கட்டப்பட்டுள்ளது. எப்படி இவ்வளவு உயரம் அடைவது.
குட்டிக் குஞ்சு அழுகையை நிறுத்தவில்லை.
கோழி வாத்திடம், 'தம்பி, நான் என்ன செய்வது? மரங்களில் இருந்து பானைகளை வீழ்த்த முடியாது.

வாத்து, 'ஒரு வழி இருக்கிறது. எனக்கு மிகவும் வலிமையானது. நான் எல்லோருக்கும் கீழே இருப்பேன். நீங்கள் என் முதுகில் சவாரி செய்வீர்கள்.
ஒன்றின் மேல் ஒன்று. எல்லோரும் பனை மரங்களின் கீழ் வாத்துகளில் சவாரி செய்தனர். குட்டிக் குஞ்சு எல்லோருக்கும் மேல். கிட்டத்தட்ட பானைக்கு அருகில். இந்த திசையில் ஒரு காகம் பறந்து கொண்டிருந்தது.

கீழே பாருங்கள் ஒரு பெரிய பறவை. அப்படி ஒரு பறவையை நான் இதுவரை பார்த்ததில்லை. கீழே வாத்து, கோழி மேலே. இதுவும் மரத்தைப் போன்றதே. காகம் பயந்து கூவியது. காகத்தின் சத்தம் கேட்டு வாத்து பயந்து போனது.
தில் கடுமையாக ஓடினார். ஒருவர் மேல் ஒருவர் விழுந்தார். இனி சாறு உட்கொள்ளவில்லை. ஜூஸ் சாப்பிடும் நம்பிக்கை அப்படியே இருந்தது.

Drink Juice 🌴

A small bush along the bill. There lives a duck. The duck lives alone. 
He left home in the morning. Swims in the bill all day. Catches and eats fish. 
eats snails eats algae Return home when the sun sets. One day a chicken came to talk to a duck. 
Along with eight chicks, big and small. It's winter now. Juicing pots tied to palm trees. 
The little chick likes to eat palm juice. The juice pot is tied high. How to get so high.
The little chick doesn't stop crying. 

The chicken said to the duck, 'Brother, what do I do? Pots cannot be brought down from trees. 
Duck said, 'There is a way. Too strong for me. I will be below everyone. You will ride on my back. 
One on top of another. Everyone rode on ducks under palm trees. The little chick is on top of everyone. Almost near the pot. A crow was flying in this direction. Look down and see a big bird. I have never seen such a bird before. Duck down, chicken up. It is also the same as a tree. The crow crowed in fear. The duck got scared after hearing the crow's cry. Dil ran hard. One fell on top of the other. No more juice was consumed. The hope of eating juice remained.


Bere il Succo 🌴

Un piccolo cespuglio lungo il becco. Lì vive un'anatra. Le anatre vivono sole.
È uscito di casa la mattina. Nuota tutto il giorno nell'edificio. Prende il pesce e lo mangia.
Mangia lumache, mangia alghe e torna a casa quando il sole tramonta. Un giorno la gallina venne a parlare con l'anatra. Era accompagnato da otto pulcini di tutte le dimensioni. È inverno adesso. Pentola per succhi legata ad una palma. A questo pulcino piace mangiare il succo di palma. La pentola del succo è legata in alto. Come fai ad arrivare così in alto? Il pulcino non smette di piangere. La gallina disse all'anatra: "Fratello, cosa devo fare?" Non rimuovere il vaso dall'albero.

L'anatra disse: "C'è un modo". Troppo forte per me. Sarò inferiore a tutti gli altri. Pedalerai sulla mia schiena. Si sovrappongono uno dopo l'altro. Abbiamo cavalcato tutti le anatre sotto le palme. Un pulcino è sopra tutti. È quasi vicino alla pentola. Un corvo volò verso di noi. Quando guardo in basso, vedo un grande uccello. Non ho mai visto un uccello simile prima. Abbassati, alzati.
È lo stesso di un albero. Il corvo gracchiò di paura. L'anatra ha sentito il corvo e si è spaventata. Dill correva forte. Uno cadde sopra l'altro. Non è stato consumato più succo. La speranza di mangiare il succo rimaneva.








এক বিকেলে রঙের খেলা | रंग खेलने की एक दोपहर Bangla and Hindi Golpo

 


এক বিকেলে রঙের খেলা

বিকেলবেলা। মিতু, অপু, রূপা ও সোমা রানু আপার সাথে উঠোনে গল্প করছে। উঠোনের কোণে গাছভরা বেগুন। গল্পের ফাঁকে হঠাৎ মিতু বলে ওঠে, 'কী সুন্দর বেগুন ধরেছে। আচ্ছা, রানু আপা, বেগুনের এতো সুন্দর রঙ, কিন্তু এর নাম তো জানি না। রানু আপা বললেন, 'কেন, বেগুনি। এই রঙের অনেক ফুল আছে, জানো? শিমের ফুল, কচুরিপানার ফুল, জারুল ফুল- আরও কত!

সবাই বলে উঠলো, 'রানু আপা, আজ বিকেলে তুমি আমাদের রঙ চেনাবে?' হঠাৎ মিতুর জামার দিকে রূপার চোখ পড়ল। ভারী সুন্দর রঙ তো। 'আচ্ছা রানু আপা, এই রঙের নাম কী?' মিতুই বলে উঠল, 'মা বলেছেন, এর রঙ নীল।' রানু আপা মিতুকে আদর করে বললেন, 'ঠিক বলেছো।

আকাশ দেখিয়ে সোমা বলল, 'আকাশের রঙ কি তাহলে নীল?' অপু বলল, 'না, এটা অন্যরকম নীল। তবে আমি এই রঙের নাম জানি না। রানু আপা বললেন, 'আকাশের আরেক নাম আসমান। এ রঙের নাম আসমানি। একে আকাশি রঙও বলে।

সবাই ঘাসের ওপর এসে বসল। কী নরম ঘাস। ঘাসে হাত বুলিয়ে মিতু বলল, 'রানু আপা, ঘাসের রঙ সবুজ। তাই না?' রানু আপা বললেন, 'বেশ বলেছ। এবার বল তো, আর কোথায় কোথায় সবুজ রঙ দেখা যায়?' সোমা বলল, 'গাছ, লতা, পাতা সবই তো সবুজ- তাই না?' রূপা বলল, 'আমি জানি, টিয়া পাখির রঙও সবুজ।

ছোট একটি পাখি পেয়ারা গাছের ডালে এসে বসল। ওকে দেখে অপু খুব খুশি হল। বলল, 'কী সুন্দর রঙের পাখি। ওকে ধরে আমি পুষব। রানু আপা বললেন, 'খাঁচায় আটকে রাখলে পাখিরা কষ্ট পায়। তার চেয়ে বল তো, পাখিটার গায়ের রঙ কী?' ওরা ভাবনায় পড়ল। রূপা বলল, 'তুমি বলে দাও, আপা।' রানু আপা বললেন, 'ওর গায়ের রঙ হলুদ। এ রঙের অনেক ফুলও আছে। সরষে ফুল, গাঁদা ফুল, সূর্যমুখী- আরও কত ফুল।

এমন সময় নানু এলেন। হাতে এক ঝুড়ি ফল। অপু বলল, 'নানু, আজ আমরা অনেক রঙের নাম জেনেছি।' নানু ঝুড়ি থেকে ফল বের করে সবাইকে দিলেন। বললেন, 'তাই নাকি? এবার বল তো, এই ফলটার কী রঙ?' সোমা বলল, 'লাল।' নানু বললেন, 'ঠিক লাল নয়, তবে লালের কাছাকাছি। 
ফলের নামেই এ রঙের নাম- 'কমলা'।' সবাই বলল, 'বাহ্, চমৎকার তো। বেগুনের মতো কমলা ফলের রঙও কমলা। 

নানু বললেন, 'গাজরের রঙও কমলা হয়। তোমরা গাজর খাও তো? নানু সবাইকে দূরের একটা গাছ দেখালেন। বললেন, 'ওটা শিমূল গাছ। বল তো, শিমুল ফুলের রঙ কী?' সবাই একসাথে বলে উঠল, 'লাল। 
নানু বললেন, 'বাহ! তোমরা দেখি সবাই লাল রঙ চেনো।' ওরা বলল, 'লাল আমাদের প্রিয় রঙ।' অপু বলল, 'জবা, ডালিম এগুলোর রঙও লাল।

আকাশ ছেয়ে মেঘ করেছে। নানু বললেন, 'বৃষ্টি নামবে। ঘরে চলো।' বলতেই ঝমঝম্ করে বৃষ্টি শুরু হল। দৌড়ে সবাই ঘরের দিকে ছুটল।ঘরে আসতে না আসতেই বৃষ্টি থেমে গেল।

নানু সবাইকে উঠোনে ডাকলেন। সবাই এল। শানু বললেন, 'আকাশটা দেখ।' সবাই আকাশের দিকে তাকাল। অবাক হল। সারা আকাশ ঘিরে বাঁকানো রঙিন টানা টানা দাগ। মাটির এপাশ দিয়ে আকাশে উঠেছে। ওপাশে গিয়ে আবার মাটি ছুঁয়েছে। রূপা বলল, 'ভারি সুন্দর! অনেক রঙ মেশানো ওটা কী, নানু?' নানু হেসে বললেন, 'তোমরা আজ রানুর কাছে অনেক রঙ চিনেছ। আগে আমাকে বল, ওখানে কী কী রঙ দেখা যাচ্ছে?' মিতু ও অপু বলতে শুরু করল, 'বেগুনি, নীল, আসমানি।' নানু ওদের থামালেন। 
বললেন, 'এবার রূপা ও সোমা বল তো।' ওরা বলল, 'সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল।' নানু হেসে বললেন, 'বাহ! এক বিকেলেই তো তোমরা অনেক রঙ চিনে ফেললে।

অপু বলল, 'কী মজা। রানু আপা, তুমি আজ যেসব রঙ দেখিয়েছ তার সবই আছে এতে। এতো রঙ মেশানো এর নাম কী, নানু?' নানু বললেন, 'এর নাম রঙধনু। এতে সাতটি রঙ আছে। বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল।' ওরা একসঙ্গে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, 'বাহ! আজ কী মজা হল। সাত রঙ চিনলাম, রঙধনুও দেখলাম।

रंग खेलने की एक दोपहर

दोपहर को मीतू, अपू, रूपा और सोमा आंगन में रानू आपा से बात कर रहे हैं। आँगन के कोने में बैंगन.
कहानी के बीच में अचानक मीतू बोली, 'कितना सुंदर बैंगन है. अच्छा, रानू आपा, बैंगन का रंग कितना सुंदर है, लेकिन मुझे इसका नाम नहीं पता। रानू आपा ने कहा, 'क्यों, बैंगनी? इस रंग के बहुत सारे फूल हैं, क्या आप जानते हैं? सेम का फूल, कचूरिपना का फूल, जरुल का फूल - और कितना!

सबने कहा, 'रानू आपा, क्या आज दोपहर को हमारा रंग पता चलेगा?' सिल्वर की नजर अचानक मीतू के कपड़ों पर पड़ी. सुंदर रंग. 'अच्छा रानू आपा, इस रंग का नाम क्या है?' मितुई ने कहा, 'मां ने कहा था कि इसका रंग नीला है।' रानू आपा ने मीतू को दुलारते हुए कहा, 'तुम सही कह रही हो।

सोमा ने आसमान दिखाते हुए कहा, 'क्या आसमान का रंग नीला है?' अपू ने कहा, 'नहीं, यह एक अलग नीला रंग है। लेकिन मुझे इस रंग का नाम नहीं पता.
रानू आपा ने कहा, 'आसमान आसमान का दूसरा नाम है. इस रंग का नाम आसमानी है. इसे नीला रंग भी कहा जाता है.

सब लोग आकर घास पर बैठ गये। कितनी मुलायम घास है. मीतू ने घास थपथपाते हुए कहा, 'रानू आपा, घास का रंग हरा है। सही?' रानू आपा बोलीं, 'बहुत कह दिया आपने.
अब बताओ हरा रंग और कहां दिखाई देता है?' सोमा ने कहा, 'वृक्ष, लताएँ, पत्तियाँ सब हरे हैं न?' रूपा ने कहा, 'मैं जानती हूं, टिया पक्षी का रंग भी हरा होता है।

एक छोटा सा पक्षी अमरूद के पेड़ की शाखा पर आकर बैठ गया। अपू उसे देखकर बहुत खुश हुआ. उन्होंने कहा, 'कितना सुंदर रंग का पक्षी है। मैं उसके लिए भुगतान करूंगा. रानू आपा ने कहा, 'पक्षियों को पिंजरे में बंद करने पर तकलीफ होती है। 'मुझे बताओ, पक्षी के शरीर का रंग क्या है?' उन्होंने सोचा। रूपा ने कहा, 'तुम ही बताओ, तुम।' रानू आपा ने कहा, 'उनकी त्वचा का रंग पीला है. इस रंग के फूल भी बहुत होते हैं। सरसों के फूल, गेंदे के फूल, सूरजमुखी - और कितने फूल।

तभी नानू आ गया. हाथ में फलों की टोकरी. अपू ने कहा, 'नानू, आज हमने कई रंगों के नाम सीखे हैं।' नानू ने टोकरी से फल निकाला और सबको दिया। उन्होंने कहा, 'क्या ऐसा है? अब बताओ, यह फल किस रंग का है?' सोमा ने कहा, 'लाल।' नानू ने कहा, 'बिलकुल लाल नहीं, लेकिन लाल के करीब। इस रंग का नाम फल के नाम पर रखा गया है - 'नारंगी'। सभी ने कहा, 'वाह, यह बहुत अच्छा है। बैंगन जैसे नारंगी फल भी नारंगी रंग के होते हैं।
नानू ने कहा, 'गाजर का रंग भी नारंगी होता है। क्या आप गाजर खाते हैं?

नानू ने सबको एक दूर का पेड़ दिखाया। उन्होंने कहा, 'वह जड़ वृक्ष है। बताओ, शिमुल फूल का रंग कैसा होता है?' सबने एक साथ कहा, 'लाल! नानू ने कहा, 'वाह! आप सभी लाल रंग को जानते हैं।' उन्होंने कहा, 'लाल हमारा पसंदीदा रंग है।' अपू ने कहा, 'जाबा, अनार भी लाल रंग के होते हैं।

आसमान बादलों से ढका हुआ है. नानू ने कहा, 'बारिश होगी. घर जाओ।' पानी बरसने लगा। सभी लोग घर की ओर भागे। जैसे ही वह घर आया, बारिश रुक गई।

नानू ने सभी को आँगन में बुलाया। सब आये. शानू ने कहा, 'आसमान की ओर देखो।' सभी ने आसमान की ओर देखा। हैरान। आकाश के चारों ओर घुमावदार रंगीन धारियाँ। ज़मीन से आसमान तक उठता है. वह दूसरी तरफ गया और फिर से जमीन को छू गया। रूपा बोली, 'बहुत सुन्दर! 'यह क्या है, नानू, कई रंगों को मिलाना?' नानू ने मुस्कुराते हुए कहा, 'रानू से आज तुम्हें कई रंग पता हैं।' पहले बताओ वहां कौन से रंग दिखते हैं?' मीतू और अपू कहने लगे, 'बैंगनी, नीला, आसमानी.' नानू ने उन्हें रोका. उन्होंने कहा, 'अब रूपा और सोमा को बताओ।' उन्होंने कहा, 'हरा, पीला, नारंगी, लाल।' नानू ने मुस्कुराते हुए कहा, 'वाह! आप एक ही दोपहर में कई रंग जानते हैं।

अपू ने कहा, 'क्या मजा है. रानू आपा, इसमें वो सारे रंग हैं जो आपने आज दिखाए हैं। 'इतने सारे रंगों को मिलाने का नाम क्या है, नानू?' नानू ने कहा, 'इसका नाम रंगधनु है। इसके सात रंग हैं. बैंगनी, नीला, आसमानी, हरा, पीला, नारंगी और लाल।' उन्होंने एक साथ ताली बजाई और कहा, 'वाह! कितना मजेदार दिन है.
मैंने सात रंग पहचाने और इंद्रधनुष देखा।

আকাশ ভেঙে পড়া | The sky is falling bangla Golpo 2024

 


 আকাশ ভেঙে পড়া

আজ আমরা আকাশ ভেঙ্গে পড়ার গল্প শুনবো :-

নদীর ধারে বন। সেই বনে ছিল এক খরগোশ। একদিন খরগোশ তালগাছের নিচে চোখ বুজে শুয়েছিল। হঠাৎ শোনে 'মড়মড়' 'সড়সড়' শব্দ। তারপরই বিরাট এক আওয়াজ, ধপাস্।
ভয়ে খরগোশ দিল লাফ। ছুটতে লাগল সে। খরগোশ ছুটছে তো ছুটছেই। ছুটতে ছুটতে পথে দেখা হল মহিষের সাথে। মহিষ বলল, 'কী হয়েছে, ভাই? অমন করে ছুটছ কেন?' খরগোশ বলল, 'আকাশ ভেঙে পড়ছে। বাঁচতে হলে পালাও। 

বলেই আবার দিল ছুট। মহিষও পিছন পিছন ছুটতে শুরু করল। দেখা হল ঘোড়ার সাথে। 
ঘোড়া জানতে চাইল, 'কী হয়েছে, ভাই? এভাবে তোমরা দৌড়াচ্ছ কেন?' খরগোশ বলল, 'আকাশ ভেঙে পড়ছে। বাঁচতে হলে পালাও। ঘোড়াও তাদের সাথে দৌড়াতে লাগল।

বনের রাজা সিংহের কাছে খবর গেল, খরগোশ ছুটে পালাচ্ছে। তার পিছন পিছন অন্য সব পশুরাও ছুটছে। ব্যাপার কী? সিংহ এগিয়ে এল। দেখে খরগোশ, মহিষ, ঘোড়া, হরিণ, হাতি, বাঘ সবাই ভয়ে পালাচ্ছে। পথ আটকে সিংহ ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। বলল, 'কী হয়েছে তোমাদের? সবাই এভাবে পালাচ্ছ কেন?' ওরা একসাথে বলে উঠল, 'মহারাজ, আকাশ ভেঙে পড়ছে। 
আপনিও পালান। সিংহ তো শুনে অবাক। বলল, 'আকাশ ভেঙে পড়ছে, কে দেখেছে?' বাঘ বলল, 'হাতি দেখেছে।' হাতি বলল, 'আমি দেখিনি। হরিণ দেখেছে।' হরিণ বলল, 'না, আমি দেখিনি। ঘোড়া দেখেছে।' ঘোড়া বলল মহিষের কথা। মহিষ বলল খরগোশের কথা। সিংহ বুঝল, এরা নিজের চোখে কিছুই দেখেনি। শুনেই ভয়ে পালাচ্ছে। 

এমন সময় খরগোশ বলল, 'মহারাজ, আমি দেখেছি। আমি তখন তালগাছের নিচে চোখ বুজে শুয়েছিলাম। হঠাৎ শুনি 'মড়মড়' 'সড়সড়' শব্দ। তারপরই বিরাট আওয়াজ, ধপাস্। বুঝলাম, আকাশ ভেঙে পড়ছে। দিলাম দৌড়। সিংহ বলল, 'বেশ, চলো। সবাই আগে তালগাছের নিচে যাই। কীভাবে আকাশ ভেঙে পড়ছে, নিজের চোখে দেখব। সবাই সিংহের পিছন পিছন তালগাছের দিকে ছুটল।

সিংহ বলল, 'বেশ, চলো। সবাই আগে তালগাছের নিচে যাই। কীভাবে আকাশ ভেঙে পড়ছে, নিজের চোখে দেখব। সবাই সিংহের পিছন পিছন তালগাছের দিকে ছুটল। সবাই খুব লজ্জা পেল। মাথা নিচু করে বলল, 'মহারাজ, আমরা কী বোকা। না বুঝেই ছুটছিলাম। পশুরাজ সিংহ বলল, 'তোমরা বোকা। 
আর খরগোশ একটা ভীতুর ডিম। এখন চল, সবাই মিলে মজা করে কাঁঠালটা খেয়ে নিই।


                      🌈 The sky is Falling


Today we will listen to the story of the sky collapsing:-

Forest by the river. There was a rabbit in that forest. One day the rabbit slept under a palm tree with its eyes closed. Suddenly he hears the sound of 'murmur'. Then a big noise, crash.
The rabbit jumped in fear. He started running. The rabbit is running. On the way he ran and met the buffalo. The buffalo said, 'What happened, brother? Why are you running like that?' 'The sky is falling,' said the rabbit. Run to survive.

So he ran again. The buffalo also started running back and forth. Meet the horse.
The horse asked, 'What happened, brother? Why are you running like this?' 'The sky is falling,' said the rabbit. Run to survive. The horse also started running with them.

The news went to the king of the forest, the lion, that the rabbit was running away. All the other animals are running behind him. What's the matter? The lion came forward. Seeing rabbit, buffalo, horse, deer, elephant, tiger all running away in fear. A lion stood in front of them blocking the way. He said, 'What happened to you? Why are you all running away like this?' Together they said, 'Maharaj, the sky is falling.

you too run away The lion was surprised to hear. Said, 'The sky is collapsing, who saw it?' The tiger said, 'He saw the elephant.' The elephant said, 'I have not seen it. Deer saw.' The deer said, 'No, I have not seen it. Saw the horse.' The horse said about the buffalo. The buffalo said about the rabbit. The lion understood that they had not seen anything with their own eyes. Running away in fear.

At that time the rabbit said, 'Maharaj, I have seen. I then slept under the palm tree with my eyes closed. Suddenly I heard the word 'squeak'. Then a big noise, crash. I understand, the sky is falling. I ran. The lion said, 'Okay, let's go. Everyone goes under the palm tree first. How the sky is falling, I will see with my own eyes. Everyone ran after the lion towards the palm tree.

The lion said, 'Okay, let's go. Everyone goes under the palm tree first. How the sky is falling, I will see with my own eyes. Everyone ran after the lion towards the palm tree. Everyone was very ashamed. He bowed his head and said, 'Maharaj, what fools we are. I was running without understanding. Pasuraj Singh said, 'You are fools.
And the rabbit is a coward's egg. Now let's all have fun and eat the jackfruit.

শিকারি বকু মামা | Shikari Baku Mama Bangla Golpo

 


✅ শিকারি বকু মামা

গেলবার বাবার সাথে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। গাছগাছালির ছায়ায় ঢাকা শান্ত গ্রাম। নিরিবিলি পরিবেশ। মজাই আলাদা। একদিন বাবার সাথে হাটে গেলাম। হাট থেকে ফিরে বাড়ির দরজায় ঢুকতেই ভেতরে বেশ হৈ চৈ শুনতে পাচ্ছিলাম। কী ব্যাপার। বাড়ি থেকে বের হবার সময় তো এমন ছিল না। তবে কি নতুন কেউ এল নাকি? দরজা খুলেই মা বললেন, 'দেখ টিপু, কে এসেছে। বললাম, 'কে?' 'তোর ছোট মামা।' বসার ঘরে যেতেই মামা তো হৈ হৈ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, 'বেশ লম্বা হয়েছিস তো রে। বস বস। মামাকে বললাম, 'তোমার মতো এখনও হইনি। মা আজ ভীষণ খুশি। খুশি বাবা আর আমরাও। সেই কবে মামাকে দেখেছি। মামা অনেকদিন পরে এলেন। 

গ্রামের বাড়ির টাটকা সবজি, ফুলজোড় নদীর মাছ এসব দিয়ে খাবার আয়োজন। খাওয়ার সময় মা জিজ্ঞেস করলেন, 'বকু, থাকছিস তো কদিন?' সবার মন খারাপ করে দিয়ে মামা বললেন, 'না, ছোট আপা, থাকার সময় নেই। মা রেগে বললেন, 'কী এমন কাজ শুনি, সব সময় ঘুরে বেড়াস।' মামা বললেন, 'তুমি বুঝতে পারছ না, ছোট আপা। আমাকে যেতেই হবে। চিতাই গ্রামের চেয়ারম্যান নিজে লোক পাঠিয়েছেন। মামার যাবার আয়োজন শেষ। মা মামাকে জিজ্ঞেস করেন, 'চিতাই গ্রামে তোর কী কাজ?' মামা বললেন, 'শোন, আপা, ওই গ্রামে একটা বাঘ এসেছে। শুনেছি বাঘটি ভয়ংকর। দু'তিনটে গরু সাবাড় করে দিয়ে এখন মানুষ ধরার মতলবে আছে। তার আগেই ওকে থামাতে হবে। 

গ্রামের সবাই অবশ্য চেষ্টা করছে। তবে, শেষ পর্যন্ত বকুল চৌধুরী ওরফে এই বকু শিকারিরই ডাক পড়েছে। ভাবছি, এই কাজে ভাগনে পুটুকেও সাথে নেব। মা বললেন, 'দ্যাখ, বকু, এগুলো আমার ভালো লাগে না। তুই পুটুকে নেবার কথা বলছিস কেন?' আপা, ভয় পেয়ো না। আমি ভাগনেকে সাহসী করে গড়ে তুলতে চাই। কিরে পুটু, রাজি তো?' আমি তো এক কথায় রাজি।পরদিনই দু'জন রওনা হলাম। মা বললেন, 'দেখিস ভাই, ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছিস।' মামা বললেন, 'আপা, তোমার ওই এক দোষ। ও তোমার ছেলে, আমারও তো ভাগনে। চিতাই গ্রামে পৌঁছলাম তিনটে নাগাদ। বাইরে একটু শীতের আমেজ। চেয়ারম্যানের বিরাট বাড়ি। 

দেখলাম বকু শিকারিকে দেখার জন্য অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। মামা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, 'আমার ভাগনে পুটু। আমার অ্যাসিস্টেন্ট। মামার এরকম অ্যাসিস্টেন্ট দেখে কেউ কেউ বোধ হয় হতাশ হল। মামা কিন্তু এগুলো নিয়ে কিছু মনে করলেন না। ঘাড় থেকে ব্যাগ নামিয়ে বললেন, চেয়ারম্যান সাহেব, শিকারের জায়গাটা এক্ষুণি দেখতে চাই। চেয়ারম্যান বললেন, 'সে কি স্যার, এত পরিশ্রম করে এলেন; আগে একটু বিশ্রাম নিন। তারপর সব কথা।'মামা না না বলতেই আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, 'আজ থাক, মামা।' ক্ষুধায় আমার পেট তখন চোঁ চোঁ করছিল।

খেতে বসলাম। দেখলাম আয়োজনের কমতি নেই। আমাদের সাথে আরো দু'তিন জন খেতে বসেছিল। বেঁটে ধরনের প্রায় মামার বয়সী একজন বললেন, 'তা, বাঘ মারার অভিজ্ঞতা স্যারের কেমন?' মামা বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, 'তা কি সবাইকে বলতে হবে?' মামার জবাব শুনে লোকটা একটু অপমানিত হল। হেসে বলল, 'না না, এমনিতেই বললাম।' আমার মনে হচ্ছিল কেন যেন মামাকে শিকারি হিসাবে ওর পছন্দ হচ্ছিল না। চেয়ারম্যান সাহেব লোকটাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, 'ওর নাম গুপী, আমার এখানেই থাকে। বনে-বাদাড়ে ঘোরে, খুব সাহসী। আর হ্যাঁ, ও অনেক পশুপাখির ডাক নকল করতে পারে। পরদিন বেলা দু'টো। আমি, মামা, চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির দু'জন লোকসহ বসে বাঘ মারার পরিকল্পনা করলাম। মনে হচ্ছে যেন বড়সড় এক যুদ্ধে যাচ্ছি। 

বনের মধ্যে দু'টো গাছের মাঝখানে শত্রু কাঠের খাঁচা, ওপরে কপিকল। ঠিক তারই নিচে টোপ হিসাবে ছাগল বাঁধা থাকবে। যেই বাঘ ছাগল ধরতে আসবে, অমনি খাঁচাটি কপিকলের সাহায্যে নিচে ছেড়ে দেয়া হবে। যদি বাঘ বাড়াবাড়ি করে তবে গুলি করা হবে। গুলি করবে চেয়ারম্যান বাড়ির ওই দু'জনের একজন। রকিব, আমরা সবাই বসব খাঁচার একটু দূরে। দশ ফুট উঁচু মাচায়। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, 'আপনার কথামতো সব প্রস্তুত আছে।' চেয়ারম্যানের দুই লোক রকিব ও পানু রওনা দিল শিকারের জায়গায়। টোপ হিসেবে যে ছাগলটি ওরা নিয়ে যাচ্ছিল তা খুবই দুর্বল। মনে হল, বাঘের ডাক শুনলেই ওটা জ্ঞান হারাবে।আমি আর মামা সন্ধ্যার দিকে রওনা দিলাম। কারণ বাঘ নাকি গ্রামের পশ্চিম দিকের নদী পেরিয়ে সন্ধ্যার পরই গাঁয়ে হানা দেয়। 

মামা বললেন, 'বাঘ নদী পার হবার আগেই আমরা মাচায় উঠব। তাড়াতাড়ি চল।'গ্রামের শেষ মাথায় এসে পড়েছি। চারপাশে জঙ্গল। মামা আগে, আমি পিছে। মামার কাঁধে ঝোলা। তার মধ্যে কিছু শুকনো খাবার। কারণ বাঘ সন্ধ্যা সাতটায়ও আসতে পারে আবার রাত তিনটেয়ও আসতে পারে। কিছু খেতে তো হবে। এমন সময় হঠাৎ জঞ্জালের ভেতর থেকে বাঘের ডাক। যেন এখনি ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে। মামা বললেন, 'পুট, দে ছুট।' দু'জনে মিলে দিলাম ছুট। কোনোদিক না দেখে সামনে একটা ঘরে ঢুকে পড়লাম। ঘরে ঢুকে দেখি, কটা ছাগল আর একটা গরু বাঁধা। বুকটা তখনও ধক ধক করছিল। কোনো রকমে বসেছি, আবার সেই ডাক।মনে হল এরপর বোধ হয় এই গোয়াল ঘরেই ঢুকবে। মামা ঘরের দরজা আঁটতে গিয়ে গোবরে পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেলেন। ওইভাবে শুয়ে পড়ে দরজা এঁটে ধরলেন। 

বললেন, 'তাড়াতাড়ি হুড়কো লাগা।' আমি অন্ধকারে হাতড়ে গিয়ে মামার পিঠের ওপর পড়ে গেলাম। মামা নিচে আমি মামার পিঠে। মামার বুকের নিচে গোবর। ওভাবে দরজা এঁটে থাকলাম। চুপচাপ পড়ে আছি। একটু পরেই শুনি মামার নাক ডাকার আওয়াজ। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। গরুর হাম্মা রবে ঘুম ভেঙে দেখি, ভোর হয়ে গেছে। মামাকে ডাকলাম। মামা উঠলেন, কিন্তু সারা গায়ে গোবর। আমারও কিছু লেগেছে।রাস্তার পাশের পুকুরে গা ধুয়ে চেয়ারম্যানবাড়ি ঢুকলাম। আমাদের দেখে বাড়ির এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে বললেন, 'আপনারা বিশ্রাম নিন। আমি নাস্তা আনছি। চেয়ারম্যান সাহেব থানায় গেছেন। বাঘ খাঁচায় আটকা পড়েছে তাই জানাতে। 'মামা, বাঘ আটকা পড়েছে?' জিজ্ঞেস করতেই মহিলা বললেন, 'কেন, আপনারা ছিলেন না। 

আমি বললাম, 'হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে, আপনি বলুন। ভদ্রমহিলা বললেন, 'রাত বারোটার দিকে যেই বাঘ এসে ছাগলটা ধরতে যায়, অমনি পানু খাঁচা ফেলে দেয়। বাঘ আটকা পড়ে। বাঘের লাফালাফির চোটে ছাগলটা খাঁচার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওটাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, আপনারা জানেন না?' মামা বললেন, 'আমাদের আর সময় নেই। আমরা চললাম। 'সে কি! সবাই আসুক। তারপর না হয় যাবেন। কে শোনে কার কথা! ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে বড় রাস্তার দিকে হাঁটা দিলাম। তাড়াতাড়ি বাস ধরে বাড়ি ফিরব। বাসে উঠে মামাকে বললাম, 'ঘটনাটা কেমন যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে। 

বাঘ আসল রাত বারোটায়। তাহলে আমরা কিসের ডাকে ভয় পেলাম। এগুলো ঐ গুপী ব্যাটার কান্ড না তো!' মামা বললেন, 'ঠিক তাই। ওই আমাদের বাঘের ডাক নকল করে ভয় দেখিয়েছে। মামাকে বললাম, 'ক'দিন আমাদের বাড়িতে থেকে যাও।' দীর্ঘশ্বাস ফেলে মামা বললেন, 'তাই করবো ভাবছি, এসব শিকার টিকার আর ভালো লাগে না।


পাতা কুমার | Pata Kumar Bangla Golpo

 


পাতা কুমার

পাশাপাশি দুটি ছোট রাজ্য। একটির নাম কাঞ্চননগর, অন্যটি চম্পকনগর। দুটি রাজ্যের সীমানায় একটি নদী। নাম দুধসাগর। নদীর তীরে দাদাভাই অপু চৌধুরীর বাড়ি। আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের ছায়াঘেরা বাড়িতে দাদাভাই স্কুল খুলেছেন। দাদাভাইয়ের স্কুলে খুব আনন্দ। পড়ালেখা, গানবাজনা, খেলাধুলা সবই হয়। দাদাভাইয়ের স্কুলে এলে কেউ আর যেতে চায় না। কাঞ্চননগরে আছে এক রাজপুত্র, নাম পাতাকুমার। চম্পকনগরে আছে এক রাজকন্যা, নাম চম্পাবতী। রাজ্য দুটির মানুষেরা খুবই নিরীহ। কেউ কারো সাথে গোলমাল করে না। কোনো অসুবিধা হলে দাদাভাইয়ের কাছে আসে। তিনি সব ঠিক করে দেন। দাদাভাইকে সবাই খুব মানে। হঠাৎ কী নিয়ে যেন দু রাজার মধ্যে গোলমাল দেখা দিল। কেউ কারো মুখ দেখে না। একজন আর একজনের নাম শুনতে পারে না। একজন একটা কাজ করল, তো অপরজন পাল্টা আরেকটা করে। কাঞ্চননগরের রাজা হয়তো দাওয়াত দিয়ে দুই শ লোক খাওয়ালো। অমনি চম্পকনগরের রাজা চার শত লোক খাইয়ে দেয়। রাজায় রাজায় গোলমাল থাকলেও দু রানীর মধ্যে কিন্তু খুব মিল। সব দেখেশুনে দাদাভাই ভাবলেন, এরকম করলে তো দুটি রাজ্যেরই ক্ষতি হবে। কাঞ্চননগরের এক মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, 'বাপু হে, তোমরা গোলমাল থামাও। মন্ত্রী বলে, 'না, দাদাভাই। চম্পকনগরের রাজা আমাদের অপমান করেছে।' কী অপমান করেছে, জিজ্ঞেস করলে আর বলতে পারে না। দাদাভাই বুদ্ধিমান। বললেন 'আচ্ছা, কাঞ্চননগরের দুটি স্কুল ভেঙে গেছে। ও দুটিকে দালান করে দাও দেখি। মন্ত্রী রাজাকে বললে রাজা স্কুল দুটি দালান করে দিলেন। খবর গেল চম্পকনগরে। রাজা শুনে বললেন, 'কী? ওরা দুটো স্কুল পাকা করছে? আমি চারটা নতুন স্কুল বানাবো। তাছাড়া, বেশি বেতন দিয়ে ভালো শিক্ষকও রাখব। দাদাভাই শুনে খুশি হলেন। দেখলেন প্রতিযোগিতা ভালোর দিকেই যাচ্ছে।
এদিকে পাতাকুমার আর চম্পাবতী দাদাভাইয়ের স্কুলে পড়া শুরু করে। ওরা দুজনেই পড়ালেখায় ভালো। দাদাভাই ওদের খুব ভালোবাসেন। দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে বছর যায়। পাতাকুমার আর চম্পাবতী বড় হতে থাকে। দুই রানী ভাবেন, চম্পাবতীর সাথে পাতাকুমারের বিয়ে হলে মন্দ হয় না। 
কিন্তু বেঁকে বসলেন চম্পকনগরের রাজা। কোনমতেই তিনি চম্পাবতীকে পাতাকুমারের সাথে বিয়ে দেবেন না। অনেক দিন পরের কথা। চম্পকনগরের রাজা ঘোষণা দিলেন রাজকন্যা চম্পাবতীর বিয়ে দেবেন। দুধসাগর নদীর তীরে বিশাল শামিয়ানা টানানো হল। রাজার পোষা হাতির পিঠে চড়বে রাজকন্যা চম্পাবতী। হাতির শুঁড়ে থাকবে মালা। নানা রাজ্য থেকে আসা রাজকুমারেরা সামনে বসে থাকবেন। 
হাতি যাকে মালা পরাবে তার সাথেই চম্পাবতীর বিয়ে হবে। রাজার এ ঘোষণায় সবাই চিন্তিত হলেন। হাতি কার না কার গলায় মালা পরায়। দাদাভাইয়ের কাছে এলেন কাঞ্চননগরের রানী। তাঁর ইচ্ছে পাতাকুমারের সাথে চম্পাবতীর বিয়ে হোক। মনের কথা খুলে বললেন দাদাভাই। দাদাভাই কিছুক্ষণ ভাবলেন। বললেন, পাতাকুমার যেন তার সাথে দেখা করে। অনুষ্ঠানের দিন নানা রাজ্যের কুমারেরা এসেছেন। কেউ বেলকুমার, কেউ ডালিমকুমার। আবার কেউ জ্যোতিকুমার, দ্যুতিকুমার, দুধকুমার, ঘিকুমার। পরনে বাহারি সাজ। পাতাকুমারের সাজ অন্যরকম। দাদাভাইয়ের বুদ্ধিমতে সে গলায় কলাপাতার মালা পরেছে। তা দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। হাতিকে সাজানো হয়েছে। শুঁড়ে ফুলের মালা। পিঠে রাজকন্যা চম্পাবতী। রাজপেয়াদা ঘণ্টা বাজালো। ঢংঢংঢং। হাতি সভায় ঢুকল। 
সবার বুক ধুকধুক করছে। কার না কার গলায় হাতি মালা দেয়। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাতি। 
সামনে বেলকুমার, দুধকুমার, জ্যোতিকুমার, দ্যুতিকুমার, ডালিমকুমার, ঘিকুমার। সবাইকে তো ফেলে গেল। কী হবে এখন? কে হবে চম্পাবতীর বর? সবাইকে অবাক করে দিয়ে মালা পড়ল পাতাকুমারের গলায়। সাথে সাথে ঢাক-ঢোল বেজে উঠল। হাতি পাতাকুমারের গলার কলাপাতার মালা ছিঁড়ে খেতে লাগল। কাঞ্চননগরে খবর গেল। রাজা-প্রজা সবাই খুশি। দাদাভাই দু রাজ্যের রাজাদের ডাকলেন। বললেন, 'আর গোলমাল নয়। বিয়ের আয়োজন করুন। আজ থেকে আপনারা একে অপরের আত্মীয়।'
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল পাতাকুমার আর চম্পাবতীর।

পাহাড় পুর | Pahar Pur Bangla Golpo

পাহাড় পুর

শীত যাই যাই করছে। ক'দিন পরই গরম পড়বে। কিন্তু আমাদের স্কুলে বনভোজনের কোনো আয়োজন নেই। আমরা প্রতিদিন টিফিনের সময় আমতলায় বসে এ আলোচনাই করি। 
আসিফ বলল, 'শুধু নিজেরা আলোচনা করলেই হবে? তোমরা তো বড় আপার কাছে যেতে চাও না।
 বড় আপাকে না বললে কিছু হবে?' শেষে ঠিক হল আমি, মনিরা, ঝুমুর, রফিক ও মৌ বড় আপার কাছে কথাটা বলতে যাব। বড় আপা খুব সহজেই রাজি হলেন। তারিখ ঠিক হল ফাল্গুনের মাঝামাঝি। যাব নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর। আমরা খুশি মনে বড় আপার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। 
মনিরা আর ঝুমুর বলল, 'আমরা সালাদ কাটব। আসিফ চুলার কাঠ কাটবে।' আমি বললাম, 'আমি শুধু বসে থাকব। মনিরা বলল, 'তুমি কবে কাজ করো শুনি?' আমি বললাম, 'আমি তো তোমাদের মতো কাজের মেয়ে না।' এ কথায় মনিরা খুব খেপে গেল। ঝুমুর বলল, 'থাক, ঝগড়ার দরকার নেই। 
চল সবাই পিকনিকের আয়োজন করি। যাবার আগের দিন বড় আপা স্যারদের ডেকে আমাদের নিয়ে বসলেন। স্যারকে বড় আপা দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন। 
আমরা যে যার মতো পোশাক পরতে পারব শুনে সবাই খুব খুশি। ঠিক হল সকাল সাতটায় স্কুল গেট থেকে বাস ছাড়বে।
সকাল দশটার দিকে আমরা পাহাড়পুরে পৌঁছলাম। বেশ খানিকটা দূর থেকেই অবশ্য উঁচু পাহাড়ের মতো জায়গাটা দেখা যাচ্ছিল। 
সবাই আনন্দে বলে উঠল, 'ঐ যে!' আমরা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। জহির স্যার রান্নার দায়িত্বে। তিনি বাবুর্চি নিয়ে এক পাশে চলে গেলেন। সবাই খুব খুশি। 
কিন্তু বড় আপা যখন বললেন 'আমি তোমাদের একটা ক্লাস নেব', তখন যেন সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।
মনিরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, 'আপা এখানেও ক্লাস?' ঝুমুর কানে কানে বলল, 'যদি পড়া ধরে?'
আমাদেরকে বড় আপা একটা গাছের ছায়ায় নিয়ে গেলেন। আমরা সেখানে বসলাম। বড় আপা বললেন, 'আমি ক্লাস নেব না। গল্প শোনাব। শুনবে তো?' সবাই বললাম, 'আপা, হ্যাঁ।
এখানে শুধু যে আমরাই এসেছি তা নয়। দেখলাম গোটা এলাকাতেই অনেক মানুষ। ওরাও পাহাড়পুর দেখতে এসেছে। আমাদের সামনে বড় আপা দাঁড়ালেন। বললেন, 'আমার কথা শেষ হলে তোমরা বেড়াবে। খুঁটে খুঁটে সব দেখবে, তখন ভালো লাগবে।
' বড় আপা আরো বললেন, 'পাহাড়পুর নাম হলেও এখানে কোনো পাহাড় নেই। এ এলাকা সমতল। যাঁরা এটি তৈরি করেছেন তাঁদের আমলে এ জায়গাটির নাম ছিল সোমপুর।
' আসিফ বলল, 'আপা, কারা এটি তৈরি করেছে?' 'পাল রাজারা', বললেন আপা, 'আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে এটি তৈরি করেন পাল রাজা ধর্মপাল। 
এ বিহারের চারদিকে ১৮ ফুট পুরু দেয়াল ছিল। দরজা ছিল একটি।' ঝুমুর বলল, 'আপা, বিহার কী?' আমার মনে হল ঝুমুরের বোধ হয় এতক্ষণে বিশ্বাস হয়েছে বড় আপা পড়া ধরবেন না। আপা বললেন, 'বিহার হল বৌদ্ধদের মঠ বা মন্দির। 
আগের আমলে বিহার বলতে কেবল বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় বোঝাতো।' মৌ বলল, 'ওরে বাবা, এটা তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। বড় আপা দূরে দেখিয়ে বললেন, 'দেখ, ঐ যে মাঝখানে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উঁচু, যাকে তোমরা পাহাড় বলছ। ওটা ছিল মন্দির।  আর মন্দিরকে ঘিরে ঘর ছিল ১৭৭টি। ঘরগুলো বেশ বড় ছিল।
এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন। লেখাপড়ার জন্য এটা ছিল আদর্শ স্থান। তাদের জন্য গোসলখানা, খাবারঘর, রান্নাঘর সবই ছিল। চল সবাই এখন ঘুরে দেখি।'
সবাই চুন-সুড়কি দেওয়া পথে হাঁটতে লাগলাম। মূল মন্দিরের চারদিকে ঘুরলাম। দেখলাম দেয়ালে বসানো পোড়ামাটির নানা মূর্তি। আমরা দল বেঁধে হাঁটছিলাম। ঘরগুলো দেবে গেছে মাটির নিচে। কিন্তু মনে হচ্ছে জায়গাটা কত পরিচিত। বড় আপার গল্প না শুনলে শুধু হেঁটেই যেতাম, কিছুই বুঝতাম না।
এক জায়গায় দেয়ালের ওপর বসলাম। ভাবছি, আজকের এই পাড়া- গাঁ কয়েক শত বছর আগে কত বড় শিক্ষাকেন্দ্র ছিল।  কত ছাত্র আসতো নানা দেশ থেকে। যেখানে বসে আছি হয়তো কোনো ছাত্র দিনরাত খেটে তাঁর পড়া তৈরি করতেন এখানে।  মনিরা বলল, 'এই চল সবাই, জহির স্যার ডাকছেন, বোধ হয় রান্না হয়ে গেছে।' সবাই খেতে বসলাম। বড় আপাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এগুলো এরকম হল কীভাবে?' আপা বললেন, 'এক সময় কিছু বিদেশি রাজা আর এদেশের রাজাদের বারবার আক্রমণে এর খুব ক্ষতি হয়। পরবর্তী সময়ের রাজারা আর সাহায্য সহযোগিতা করলেন না। ভিক্ষুরাও চলে গেল অন্য জায়গায়। 
এভাবেই নষ্ট হতে থাকল এত বড় শিক্ষাকেন্দ্র। এখন অবশ্য এটা সরকারিভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। 
না হলে এক সময় হারিয়ে যাবে আমাদের অনেককাল আগের এই সম্পদ।' পেট পুরে খেলাম। 
বাসে বাড়ি ফিরছি আর ভাবছি, আরো অনেকবার এখানে আসব। আরো জানব।

দৈত্য প্রজাপতির গল্প | The Story Of monster butterfly 2024

 


দৈত্য প্রজাপতি

ফেন্টু মামা আর আমি। যাচ্ছিলাম সিলেট। বেড়াতে। সিলেট জেলায় ঢুকতেই রাত্রি হল। অন্ধকার রাত। দুপাশে ছোটবড় পাহাড়। আবছা দেখা যাচ্ছে।তার মধ্য দিয়ে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে। এমন সময় রেলগাড়িটা হঠাৎ থেমে গেল। বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেল, গাড়ি আর চলে না।
সবারই এক কথা, চলছে না কেন? ফেন্টু মামা বললেন, 'এর আগে তিনবার থেমেছে। কিন্তু এবারের মতো এত দেরি তো করেনি।' জানালা দিয়ে সবাই সামনে দেখার চেষ্টা করছে। কিছুই বোঝা গেল না। ফেন্টু মামা আমাকে বললেন, 'একটু দেখে আসি ব্যাপারটা কি।' বলামাত্রই বগির মাঝের রাস্তা দিয়ে মামা এগোতে লাগলেন। অনেকক্ষণ পরে তিনি ফিরলেন। ইঞ্জিন ঘরের লোকজনের সাথে মামার কথা হয়েছে। একটা বিরাট দৈত্য নাকি বারবার রেলগাড়ি থামাতে বলছে। এতক্ষণ চালক ভয়ে ভয়েই রেলগাড়ি চালিয়েছে। বিপদ থাকায় এর আগে তিনবারই থামাতে হয়েছে। কিন্তু এবার মহাবিপদ। 

রেল লাইনের দুপাশে দৈত্যের দু'পা, আর দু'হাত ওপরের দিকে। হাত নাড়ানো দেখলে মনে হয়, পাহাড় ভেঙে ফেলবে।আশ্চর্যের বিষয়, রেলগাড়ি চললে দু'হাত নেড়ে থামতে বলে, আবার থামলে চুপচাপ। ফেন্টুমামা এসে যখন বলছিলেন, তখন বগির সবাই ভয়ে একেবারে জড়োসড়ো। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি। বরং দৈত্যটাকে নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে করছিল।

মামার কানে ফিস্ফিস্ করে বললাম, 'মামা, তুমি নিজে দেখেছ?' মামা বললেন, 'নারে, বাপু, না।' মামাকে বললাম, 'চল না মামা, দৈত্যটা দেখে আসি।' আমার কথায় ফেন্টু মামা ভয়ে ভয়ে রাজি হলেন। আমাদের সাথে ওই বগির কয়েকজন যাত্রীও গেলেন। এক বগি থেকে আর এক বগি, এমনি করে একেবারে সামনের বগিতে গিয়ে সবাই থামলাম। রেলগাড়ি থেকে নামব, এমন সময় মামা হাত ধরে টেনে বললেন, 'সত্যিই দেখবি? না গেলে হয় না।' আমি বললাম, 'চলো তো, মামা।' মামা আবারও বললেন, 'বন্দুকটন্দুক কিছুই নেই।' আমি বললাম, 'বুদ্ধি তো আছে।' সবাই নামলেন। রেলগাড়ির সামনে যেতেই ফেন্টমামা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্যটাকে দেখে দিলেন এক ছুট।

মামা ও অন্য যাত্রীদের পড়িমড়ি দৌড় দেখে রেলগাড়ির একজন চালক এগিয়ে এলেন। আমাকে দেখে বললেন, 'কোথায় যাচ্ছ, খোকা?' বললাম, 'দৈত্য দেখতে।' তার নিষেধ শোনার আগেই আমি একেবারে গাড়ির সামনে চলে গেছি। গিয়ে দেখি রেলগাড়ির হেডলাইটে একটি প্রজাপতি বসে আছে।

প্রজাপতির ছায়াটাই দেখতে বিশাল দৈত্য মনে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে সেটি উড়িয়ে দিলাম। প্রজাপতি উড়ে যেতেই দৈত্যটি মিলিয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। পারলে আমায় মাথায় নিয়ে নাচে। জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা খোকা, তুমি বুঝলে কী করে?' বললাম, 'এতো খুব সহজ ব্যাপার। হেডলাইটের ওপরে কিছু পড়লে তার ছায়া দূরে গিয়ে বড় দেখায়। একথা তো আমরা বিজ্ঞান বই পড়েই জেনেছি।' যাত্রীরা যার যার সিটে গিয়ে বসলেন। সবাই চিন্তামুক্ত। রেলগাড়ি আবার চলতে শুরু করল। 


পাথরের সাজা বাংলা গল্প | Patharer Shaja Bangla Story 2024

 

পাথরের সাজা বাংলা গল্প

পাথরের সাজা

অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে বিজু নামে এক বালক বাস- করত। তার খুব শখ শহর দেখতে যাবে। ইচ্ছে হলেই তো আর হয় না। সে সময় একালের মত রেলগাড়ি, ইস্টিমার, উড়োজাহাজ, মোটরগাড়ি কিছুই ছিল না। সে তার মা-বাবার কাছে শহর দেখার জন্য প্রতিদিন আবদার জানায়। অবশেষে অনেক চিন্তাভাবনার পর তাঁরা রাজি হলেন। বাবা তার হাতে ছোট্ট একটা থলে দিলেন।

রেখো। শহরে চলাফেরা, থাকা খাওয়ার জন্য টাকাপয়সার খুব দরকার। " মা পথে ঘাটে খাওয়াদাওয়ার জন্য পুঁটলি বেঁধে খাবারদাবার দিয়ে বললেন, 'পথে খিদে লাগলে এগুলো খেয়ো। 'পরদিন খুব সকালে বিজু মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শহরের পথে রওনা দিল। বিজুদের গ্রাম থেকে শহর অনেক দূরের পথ। চলতে চলতে সকাল, দুপুর, বিকেল গড়িয়ে ঠিক সন্ধ্যেবেলায় বিজু শহরের ধারে পৌঁছে গেল। অবাক হয়ে সে দেখে আলোয় ঝলমল করছে সারা শহর। মনে মনে খুব খুশি। এত দিনের শহর দেখার স্বপ্ন তার পূরণ হতে চলেছে। শহর তো তার অপরিচিত। কাউকে চেনে না। শহরের কোথায় কী আছে তাও তার অজানা।

ভাবল, বরং এই সন্ধ্যায় অপরিচিত শহরে না ঢুকে এক গাছতলায়। কোনমতে রাতটা কাটিয়ে দেয়াই ভালো। মায়ের দেয়া খাবার খেয়ে গাছতলায় ঘুমানোর ব্যবস্থাও করে নিল। বাবার দেয়া টাকার থলেটা নিয়েই এখন যত বিপদ। বিদেশ-বিভুঁয়ে টাকা না হলে তো চলে না। যেখানে শোবার ব্যবস্থা হয়েছে তার ঠিক পাশেই বেশ বড়সড় একটা পাথরের খন্ড। বালকটি পাথরের নিচে টাকার থলেটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।

আলোয় চারিদিক ভরে গেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ। হাতমুখ ধুয়ে মায়ের দেয়া বাকি খাবারটুকু খেয়ে শহরে ঢোকার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল। যাবার সময় পাথরের নিচে থেকে টাকাগুলো নিতে গিয়ে দেখে থলে নেই। পাথরের আশেপাশে নিচে কোথাও খুঁজে টাকার থলেটা পাওয়া গেল না।

করবে? অসহায় বালক কোনো পথ না পেয়ে কাঁদতে লাগল। শহরের ধারের ওই দিক দিয়ে অনেক লোকের যাতায়াত। পথ দিয়ে যারাই যায় বিজুর কান্না দেখে দাঁড়ায়। কেউ সান্ত্বনা দেয়, কেউ বা টাকার থলেটা খোঁজাখুঁজি করে। পথিকদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।

চুরি হয়ে যাওয়া টাকাটা কোথাও পাওয়া গেল না।

ঠিক ওই সময় শহরের বিচারক তাঁর পাইকপেয়াদা নিয়ে ওই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন। অনেক মানুষের ভিড় আর কান্নারত বালককে দেখে তিনিও থামলেন। বালক ও উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিষয়টি জানলেন। বিচারক তাঁর পাইক-পেয়াদাদের হুকুম দিয়ে বললেন, 'এই চোর পাথরটাকে তুলে নিয়ে আমার আদালতের কাঠগড়ায় হাজির কর।' এ কথা বলে তিনি হনহন করে আদালতের দিকে পা বাড়ালেন।

তার আবার বিচার? এমন আজব বিচারের কথা কি কেউ কোনোদিন শুনেছে? সকলের মধ্যেই অসম্ভব কৌতূহল। এমন আজব বিচার দেখতেই হবে। একে একে সকলেই আদালতে গিয়ে উপস্থিত হল। বিশাল আদালত ঘর। ঘরে ঠাঁই নেই। কৌতূহলী শহরবাসীর ভিড়। বিচারক তাঁর আসনে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। কাঠগড়ার পাটাতনের ওপর পাথরটা। বিচার শুরু হল।  কারো মুখে কোনো কথা নেই। আদালতঘর নীরব।

সামি পাথর হাজির!" বিচারক টেবিলে তিনবার হাতুড়ি পিটিয়ে বললেন, "অর্ডার, অর্ডার, অর্ডার। আসামি পাথর, নিরপরাধ বালকের টাকাপয়সা চুরি করেছে।  সরেজমিনে দেখে মনে হয় পাথরই এ অর্থ চুরি করেছে। তাবে পাথর নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার সুযোগ পাবে।  এ সম্পর্কে তার কথা আদালত ধৈর্য সহকারে শুনে ন্যায্য বিচার করবে।'বিচারকের কথা শুনে আদালতে উপস্থিত সকলের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। বিচারক তার হাতুড়ি তিনবার পিটিয়ে আবার বললেন, "অর্ডার, অর্ডার, অর্ডার। সবাই চুপ করুন।  এটি আদালত। বিচারের সময় হাসি-তামাশা করা অপরাধ। এ অপরাধের জন্য আদালত ইচ্ছে করলে শাস্তিদান করতে পারে। সকলেই চুপ করে গেল। বিচারক পাথরকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার নাম এবং বাবার নাম কী? বয়স কত?"

*তুমি কি বালকের টাকাটা চুরি করেছো??  পাথর চুপ।

*টাকাগুলো কোথায় রেখেছো?” পাথরের কাছ থেকে কোন জবাব মেলে না। বিচারক পাথরের কোনো উত্তর না পেয়ে পাথরকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করলেন, *পাথরটি বালকের টাকা চুরি করার জন্য অপরাধী। তাকে ত্রিশ ঘা বেত মেরে হত্যা করা হোক!"রায় শুনে উপস্থিত সকলে হাসি চাপতে চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই চেপে রাখতে পারে না। আদালত কক্ষের মধ্যে খুক খুক, হি হি, হাঃ হাঃ শব্দ গম গম করতে থাকে। এবার বিচারক জোরে জোরে হাতুড়ি পিটিয়ে সবাইকে চুপ করে থাকতে আদেশ দিলেন। “রায়ের আর একটা অংশ আছে, বলে তিনি ঘোষণা দিলেন "আদালতের বিচার কাজে বাধা দেওয়া এবং আদালতকে সঠিক সম্মান না জানানোর জন্য সবাইকে পাঁচ টাকা করে জরিমানা করা হল।'

ঘোষণা শুনে উপস্থিত সকলেই হতবাক। কিন্তু, আদালতের রায় তো হেরফের হবার নয়। সবাই মানতে বাধ্য। একে একে সকলেই গুনে গুনে পেয়াদার হাতে জরিমানার টাকা দিয়ে তবে রেহাই পেল। বিচারক বিজুকে ডেকে বললেন, “খোকা, এই টাকাগুলো তুমি রাখ। তোমার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার জন্য শহরের পক্ষ থেকে তোমাকে এই অর্থ দেওয়া হল। আশা করি এ অর্থ দিয়ে তুমি শহর ঘুরে দেখতে পারবে।” জরিমানার টাকা দেওয়ার পর সকলের রাগ গিয়ে পড়ল পাথরের ওপর। সকলে মিলে পাথরটিকে ধরাধরি করে শহরের বাইরে নিয়ে গেল। যে যেমন করে পারে পাথরটাকে আচ্ছা করে দিল মার। তারপর ঠিক হল হত্যা করা হবে। সবাই মিলে পরামর্শ করতে বসল, কীভাবে এটাকে হত্যা করা হবে। অনেক কথাবার্তা হল, পরামর্শ হল, কিন্তু পাথর হত্যা করার কোনো উপায় বের করা গেল না। সকলে বিরক্ত হয়ে পাথরটিকে পথের ধারে ফেলে দিয়ে যে যার মতো বাড়ি ফিরে গেল।





কুঁড়ো খাওয়া রাজা | King's Bengali story Bangla 2024

 


কুঁড়ো খাওয়া রাজা

এক দেশে এক রাজা ছিলেন। একদিন তাঁর ইচ্ছে হল দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা নিজের চোখে দেখবেন। কিন্তু কেমন করে যাবেন? রাজপোশাকে বের হলে তো সকলেই তাকে চিনে ফেলবে। অনেক চিন্তার পর অতি সাধারণ পোশাক পরে তিনি বের হলেন। 
সঙ্গে নিলেন এক বিশ্বাসী পেয়াদা। হাঁটতে হাঁটতে রাজা শহরের বাইরে এক গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
গ্রামের কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি সকলেই যার যার কাজে ব্যস্ত। হাসিখুশির মধ্য দিয়ে নিজের নিজের কাজ করছে। কারো কোনো দুঃখ নেই। শিশুরা হাসছে, খেলছে। আবার মনোযোগ দিয়ে পাঠশালায় পড়াশোনা করছে। রাজা নিজের চোখে তাঁর দেশের মানুষের অবস্থা দেখে মহাখুশি। 
রাজা তাঁর পেয়াদাকে ডেকে বললেন, 'চল হে, এখন ফেরা যাক।”


রাজা ফিরে চলছেন তাঁর রাজবাড়ির দিকে। ফেরার পথে দেখেন, এক বুড়ি উঠোনে বসে কুলো দিয়ে চাল ঝাড়ছে। রাজা উঠোনের ধার দিয়েই যাচ্ছিলেন। 
চালের কুঁড়োর গন্ধ চারদিকে ভুর ভুর করছে। রাজার খুব ভাল লাগল। রাজা পেয়াদাকে ডেকে বললেন, 'এই কুঁড়োর গন্ধ আমার খুব ভালো লাগছে । 
তুমি যেমন করে পার এই চালের কুঁড়ো জোগাড় কর।”
রাজার এ আদেশ শুনে পেয়াদা বলল, 'মহারাজ, আপনি এই তুচ্ছ কুঁড়ো দিয়ে কী করবেন ?
রাজা বললেন, “আহা! এই সুগন্ধ কুঁড়ো না জানি কত মজা! আমি কুঁড়ো— খাবো!" বলেন খাদ্য ।


"তা হোক, এমন সুগন্ধ খাবার আমি পাবোই।'
কী আর করা। মহারাজের আদেশ পালন করে পেয়াদাটি এক গামলা কুঁড়ো এনে হাজির করল।
কুঁড়ো দেখে রাজাতো মহাখুশি। একটা ঝোপের আড়ালে বসে রাজা মহানন্দে কুঁড়ো খেতে লাগলেন। '
খাওয়া শেষ করে রাজা বললেন, "আহা! এমন মজার খাবার আমি সারা জীবনেও খাইনি! তবে, সাবধান। 
এই বাওয়ার কথা কেউ যেন না জানে। জানলে তোমায় শূলে চড়াবো


রাজা সব কিছু দেখেশুনে, কুঁড়ো খেয়ে রাজবাড়িতে ফিরে এলেন। রাজকার্য নিয়ে আবার আগের মত দিন কাটতে লাগলো। রাজা তো আপন কাজে ব্যস্ত। কিন্তু পেয়ালার তো দিন কাটে না। রাজার কুঁড়ো যাওয়ার কথা বলতে বারণ। সে শুধু উসফুস করে, কিন্তু প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। 
এইভাবে কথা চেপে রাখতে রাখতে তার পেট উঠল ফুলে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পেট খারাপ হয়ে গেল। সারা দিনরাত ঘরের মধ্যে পায়চারি করে আর মনে মনে বলে, 'আমাদের মহারাজ কুঁড়ো যায়।"
বিড় বিড় করেও বলতে পারে না। পাছে কেউ শুনে ফেলে। শুনে ফেললেই তো তার জীবন শেষ।
নাহ, এভাবে আর থাকা যায় না। পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ঢপ ঢপ শব্দ করে। কবে না আবার ফেটে যায়। তাকে কোথাও না কোথাও গিয়ে এ কথা বলতেই হবে


ঠিক করল গভীর জঙ্গলে গিয়েই বলবে। ভাবনামতো একদিন বনে গিয়ে হাজির হল। নীরব বন। গাছের পাতাগুলোও নড়ছে না। কথাটা বলার জন্য যেই না হাঁ করেছে ঠিক তখনই পাতার খস খস শব্দ ভেসে আসে। পেছনে ফিরে দেখে এক কাঠুরে। কথা আর বলা হল না। ফিরে এল।
কোনো উপায় না পেয়ে পর দিন সে নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে গেল। বড় নদী, মাঝনদীতে সহজে কেউ আসে না। নদীর মাঝখানে গিয়ে হাল তুলে রেখে সে আয়োজন করছে কথাগুলো বলবে। এমন সময় অনেকগুলো জেলে নৌকা তার আশেপাশে এসে জড়ো হল। 
কী আর করা! এখানেও কথা বলা হল না। বাড়ি ফিরে গেল। মনে শান্তি নেই। পেট নিয়ে চলাফেরা কষ্ট। রাজার কাজও ঠিকমতো করতে পারে না।


জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে দেখে বিশাল এক গাছ। আশেপাশে কোনো জনমানুষ নেই। গাছের গুঁড়িতে একটা গর্ত। এমন জায়গা দেখে সে মহাখুশি। গাছের গর্তের মধ্যে মুখ রেখে এত দিনকার চেপে রাখা কথা বলতে লাগল: "আমাদের মহারাজ কুঁড়ো খায়, আমাদের মহারাজা কুঁড়ো খায়। 
যেই না বলা, অমনি তার পেট ফোলা চলে গেল। আবার আগের মতো সে এখন ভাল। মনের খুশিতে রাজার কাজে মন দিল।রাজবাড়ির সামনে বিশাল এক ঢোল। এই ঢোল পিটিয়ে শহরবাসীদের সময় জানানো হয়। একদিন ঢোলটি বাজাতে গিয়ে ছিড়ে গেল। রাজা তো রেগে আগুন।


হলে সবার গর্দান যাবে। অমন বিশাল একটা ঢোল বানাতে তো বড় গাছের গুঁড়ি দরকার। দিকে দিকে গাছের খোঁজে লোক ছুটলো। অবশেষে গাছও পাওয়া গেল। 
রাজ্যে এত বড় গাছ আর নেই। এই গাছের গর্তেই পেয়াদা রাজার কুঁড়ো খাওয়ার কথা বলে পেটের ভার মুক্ত করেছিল। দেশের সবচেয়ে বড় কারিগর এল। ঢোল বানানোর মহা আয়োজন চলছে। তিন দিনের মধ্যেই ঢোল বানানো শেষ। রাজা আদেশ দিলেন, নতুন ঢোল বাজানোর দিন উৎসব হবে। মন্ত্রী, পাইক- পেয়াদা, দেশের প্রজা সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হল। রাজার গুরু দিনক্ষণ ঠিক করলেন। ভোরের প্রথম আলো ফোটার মুহূর্তেই রাজা সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে বাড়ি অপেক্ষা করছে।


 রাজগুরু সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাত তুললেই রাজা সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে বাড়ি দেবেন। 
রাজা গুরুর দিকে তাকিয়ে আছেন। গুরু হাত তুললেন। রাজা মুহূর্তমাত্র দেরি না করে সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে দিলেন বাড়ি। ঢোল দ্রিম দ্রিম শব্দ না করে। আওয়াজ তুলল: আমাদের রাজা কুঁড়ো খায়। আমাদের রাজা কুঁড়ো খায়।


বটগাছের জন্মকথা | The story of the banyan tree Bangla 2024

বটগাছের জন্মকথা

                                         The story of the banyan tree  



অনেক অনেক দিন আগে এক দেশে এক রাজা ছিলেন। রাজার নাম ছিল বিদুর।
তিনি তাঁর দেশের মানুষদের খুব ভালোবাসতেন। দেশ জুড়ে ছিল সুখ আর শান্তি।
কোনো মানুষের অভাব হলে, অসুখ হলে রাজা সাথে সাথে তার খোঁজ-খবর নিতেন।
পাইক-পেয়াদারা প্রজাদের দেখাশুনা করত। পণ্ডিতগণ যত্নের সাথে শিশুদের পড়াতেন।
সেই গ্রামের কুমোর, তাঁতি, কৃষক, কামার, জেলে যার যার কাজ নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করত।
সেই গ্রামের দক্ষিণ দিকটা ছিল পাহাড় দিয়ে ঘেরা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গ্রাম, ফসলের খেত আর বাগান। পাহাড়ের ওপারে সাগর। হঠাৎ একদিন সাগরের মধ্য থেকে উঠে আসে এক বিরাট দৈত্য।

পাহাড় পেরিয়ে দৈত্যটি গ্রামে ঢুকে পড়ে। ভয়ে গ্রামের মানুষ ছুটোছুটি শুরু করতে লাগলো । এ দেশে কেউ কোনো দিন এমন বিপদ দেখেওনি কিংবা শোনেওনি। 
দৈত্যটির সামনে গরু, ছাগল, ভেড়া, মোষ যা পড়ছে তাই সে গিলে খেয়ে ফেলছে। ঘরে ঘরে কান্নার রোল- চারদিকে মানুষের মধ্যে হাহাকার।
রাজার কাছে খবর গেল। রাজা তো মহা অস্থির। এমন শান্তির দেশে এ কেমন মহাবিপদ! মন্ত্রী, রাজকর্মচারীদের নিয়ে রাজা সভায় বসলেন। 
তাঁরা এক বাক্যে বললেন, 'মহারাজ দৈত্যটাকে মারার জন্য সৈন্য পাঠানো দরকার।' সৈন্যদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। 
হাতি, ঘোড়া, তীর, তলোয়ার, বল্লম নিয়ে সৈনারা যাত্রা করল। যথাসময়ে পৌঁছে গেল সৈন্যের দল। শুরু হল দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ।
 তীর, বল্লম ও তলোয়ারের আঘাতে কিছুই হয় না দৈত্যের। হঠাৎ দৈত্যটি আকাশ ফাটিয়ে গর্জন করে ওঠে। সেই শব্দে হাতি, ঘোড়া আর সৈন্যরা সব অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। 
সুযোগ পেয়ে দৈত্য যত হাতি আর ঘোড়া ছিল, সবগুলোকে একে একে খেয়ে ফেলে।

দৈত্যটি বড় তালগাছের মত লম্বা। বিশাল থামের মতো পা, খড়ের গাদার মতো মাথা আর আগুনের ভাঁটার মত দুটো চোখ দৈত্যটির। 
অনেকক্ষণ পর একে একে সকল সৈন্যের জ্ঞান ফিরে আসে। সৈন্যরা ভয়ে কাঁপছে। জীবনে তারা কোনোদিন এমন অদ্ভুত বিশাল দৈত্য দেখেনি। 
সৈন্যদের নড়াচড়া দেখে দৈত্যটি থপথপ করে পা ফেলে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তার পায়ের ভারে থর থর করে মাটি কেঁপে ওঠে। 
দৈত্যটা ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, 'তোমাদের কোন ভয় নেই। আমি মানুষ খাই না। তোমাদের রাজাকে আমার কাছে আসতে বল। তার সঙ্গে আমার কথা আছে।'

আমি এক্ষুণি দৈত্যের কাছে যাব। সবাই রাজাকে বারণ করছে, *মহারাজ আপনি যাবেন না। দৈত্যটা ভয়ঙ্কর। ' রাজা কারো কথা শুনলেন না। 
ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি দৈত্যের সামনে এসে দাঁড়ালেন। দৈত্যকে দেখে বললেন, আমিই এই দেশের রাজা। 
তুমি আমার সঙ্গে কী কথা বলতে চাও?' দৈত্য হুঙ্কার দিয়ে বলে, "শুনুন মহারাজ, সাগরে আমার বাড়ি ঘর। ওখানে আমি আর যাব না। 
এখানেই ওই পাহাড়ের পাশে আমি থাকব। আমি আপনার দেশের আর কোনো ক্ষতি করব না। তবে, প্রতিদিন ভোরে আমার খাওয়ার জন্য একটি করে মোষ অথবা গর্ পাঠাতে হবে।'

যাবার না পাঠালে আমি আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেব না।" “তাই হবে। তবে আমার প্রজাদের তুমি কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এ কথা বলে রাজা রাজমহলে ফিরে গেলেন। সারা দেশে আদেশ জারি করলেন, প্রজারা যেন প্রতিদিন ভোরে একটি করে মহিষ অথবা গরু দৈতাকে দেয়।
এমনি করেই দিন যেতে লাগল। কিছুদিন পর রাজ্য জুড়ে হাহাকার দেখা দিল। গরু-মহিষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। চাষীরা জমি চাষ করতে পারছে না। মাঠে ফসল নেই। 
শিশুরা দুধ পায় না। সারা দেশ জুড়ে খাবার অভাব। রাজা নিজের গোলা থেকে প্রজাদের সাহায্য করলেন। কিন্তু একদিন তাও ফুরিয়ে গেল। রাজমহলেও খাদ্যের অভাব।

দয়ানু রাজা প্রজার দুঃখে মন ভার করে থাকেন। সারাক্ষণ শুধু এই বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় লোজেন। মন্ত্রীরাও কোনো উপায় বলতে পারে না।
এমনি এক সকাল। রাজা রাজমহলের বাগানে অস্থিরভাবে পায়চা করছেন। এমন সময় সোনার কাঠি হাতে লম্বা জামা পরা এক লোক রাজার সামনে এসে দাঁড়াল। 
লোকটি কাঠিটা হাত দিয়ে ধরে বলল, জয় হোক, মহারাজ। রাজা চোখ তুলে তাকালেন তার দিকে। 'কে তুমি?' আমি এক যাদুকর, মহারাজ।

"শুনেছি আপনার রাজো মহাবিপদ দেখা দিয়েছে। তাই আপনার কাছে এলাম। আমার ইচ্ছে আপনার বিপদে সাহায্য করি। 
মহারাজ যদি দয়া করে আমাকে সব কথা খুলে বলেন, তবে এই যাদুর কাঠি দিয়ে আমি চেষ্টা করে দেখব, কিছু করতে পারি কিনা।”
রাজা তাকে দৈত্যের অত্যাচারের কথা জানালেন।
যাদুকর খুব বিনয়ের সঙ্গে রাজাকে বলল,
মহারাজের যদি কষ্ট না হয় তবে আমাকে কি ওই দৈত্যের কাছে নিয়ে যাবেন??
রাজা তাকে নিয়ে যেতে রাজি হলেন। পেয়াদাদের হুকুম দিলেন দুটো ঘোড়া আনতে। ঘোড়া দুটো ছুটে চলেছে। একটার পিঠে রাজা, অপরটির পিঠে যাদুকর। 
এক সময় তাঁরা দৈত্যের কাছে পৌঁছে গেলেন। দৈত্যটা তখন কান ফাটানো শব্দে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। রাজা ও যাদুকর ঘোড়া থেকে নামলেন। 
যাদুকর বলল, 'মহারাজ, আপনি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান।' রাজা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন যাদুকর কী করে।

যাদুকর তার সোনার কাঠিটাকে মাটিতে ছুঁইয়ে দৈত্যের চারিদিকে দাগ দিল। দৈত্যটা তখনও নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে। সৈত্যটার মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো যাদুকর। 
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কাঠিটা দৈত্যের মাথার ওপর রাখল। মুহূর্তেই ঘুম ভেঙে গেল দৈত্যের।
“কে তুমি? অসময়ে আমার ঘুম ভাঙালে ?”
যাদুকর কাঠিটা দৈত্যের চোখ বরাবর ধরে বলল, "আমি তোমার যম। আজ থেকে তোমার দিন শেষ। মুহূর্তের মধ্যেই ভয়ঙ্কর দৈত্যটি যেন চুপসে গেল। 
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যাদুকরের সামনে হাত জোড় করে বসে বলল, 'হুজুর! আমাকে আপনি প্রাণে মারবেন না।

"আমি আর মানুষের ক্ষতি করব না। আমি আবার সাগরে ফিরে যাচ্ছি। কোন দিন আর এ রাজ্যে আসব না।' যাদুকর বলল, ‘তুমি যে অন্যায় করেছ তার শাস্তি তোমাকে ভোগ করতেই হবে। এই পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন ধরে তোমাকে আমি বাঁচিয়ে রাখব। তবে এখন থেকে বটগাছ হয়ে তুমি পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। তুমি শীতল ছায়া দেবে। তোমার তলায় বসে মানুষ বিশ্রাম নেবে। পাখিরা তোমার ফল খাবে, গাছে বাসা বাঁধবে। শিশুরা তোমার ছায়ায় খেলা করবে। এই তোমার শাস্তি। আর মহারাজ, আপনাকেও আমার একটা অনুরোধ- কোনোদিন আপনি বটগাছ কাটবেন না। এ বটগাছ কাটলে এলাকার বাতাস ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে যাবে। পাখিরা থাকবে না। মাঠের ফসলের ক্ষতি হবে। *
রাজা যাদুকরের কথামতো বটগাছটিকে বাঁচিয়ে রাখলেন। কোনোদিন এর একটি ডালও কাউকে কাটতে দিলেন না। গ্রামবাসীর মনে শান্তি ফিরে এল।

জ্যোৎস্নারাতের ভূত | Ghost of Jyotsnarat Bangla golpo


জ্যোৎস্নারাতের ভূত

সন্ধ্যা তখনও নামেনি। সূর্য ডোবে ডোবে। সূর্যের আলোর শেষ রেখা গাছের ওপর এসে পড়েছে। সোনালি আলোয় পাতাগুলো ঝিকমিক করছে। মা দিনের কাজগুলো শেষ করার জন্য খুব ব্যস্ত। ঠিক তখনই বাক্সপ্যাটরা নিয়ে আমার বড় ভাই শাওন হাজির। শাওনদাদা ঢাকায় থাকেন। 
পড়াশোনা করেন। অনেক দিন পরে বাড়িতে এলেন। দাদাকে দেখে আমি তো মহাখুশি। দাদা দৌড়ে এসে 'আমার পারুল বোন কই রে!' বলেই আমাকে কোলে তুলে নেন। মায়ের আনন্দমাখা চোখদুটো পানিতে টলটল করে ওঠে।

বাবা তখন বাড়ি ছিলেন না। হাটে গিয়েছেন। ফিরে এসে দাদাকে দেখে বাবাতো খুশিতে ডগমগ। 
আর আমি, সারা সন্ধ্যা দাদার কোলে বসে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছি। রাত বাড়তে লাগল। খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা যার যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছি। শেষ রাতের দিকে হঠাৎ শুনি আমাদের কাছারি ঘরের দরজায় খট খট শব্দ।

সকলের ঘুম ভেঙে গেছে। দাদা জোরে জোরে জিজ্ঞেস করেন,
'কে? কে ওখানে? কাকে চাই?'
ওপাশ থেকে উত্তর আসে,
'আমি খোকন, খোকন বলছি।
খোকন আমার একমাত্র মামা। আমাদের গ্রাম থেকে মাইল দুই দূরে আমার নানাবাড়ি। এই সময়ে খোকন মামার গলার আওয়াজ পেয়ে দাদা ভয়ে ভয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

কী ব্যাপার, মামা, এত রাতে কেন? কী হয়েছে বল তো?'
কাঁপা-কাঁপা গলায় দাদা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো জিজ্ঞেস করে। মা তো ভয়ে অস্থির। নিশ্চয়ই কোনো দুঃসংবাদ হবে। না হলে এত রাতে খোকন মামা আসবেন কেন?

মামা মাকে বললেন,
'বুবু, আব্বার কথা তো জান। মাঝরাতে উঠে হাউমাউ করে কান্না। কী ব্যাপার, কী হয়েছে। না, কোনো কথা নয়, আমি এক্ষুণি পারুলকে দেখতে চাই।'
মা বললেন,
'ঠিক আছে, সকাল হোক, তারপর রওনা দে।'
মামা বললেন,
'না বুবু, শাওন যখন এসেছে তখন আর কোনো চিন্তা নেই। আমরা এখনই রওনা দিই। ভোর হওয়ার আগেই আব্বার কাছে পারুলকে নিয়ে যেতে হবে। 
আব্বার কথা তো জানোই, না জানি আবার কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন।'
আমার ঘুমঘুম ভাব অনেক আগেই কেটে গেছে। মা আমাকে কাপড়চোপড় পরিয়ে দিয়ে মামাকে বললেন, 'রাত-বিরেতের পথ, সাবধানে যাস।'
তখন ফাল্গুন মাস শেষ হয় হয়। দক্ষিণা বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাইরে অল্প অল্প হিমহিম ভাব। তিনজন বেরিয়ে পড়লাম। ফুটফুটে জ্যোৎস্নার আলো। কুয়াশা নেই। 
চারিদিকে চুপচাপ। মাঝে-মধ্যে দূর থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসে। আমরা পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছি। গাছের পাতায় পাতায় জ্যোৎস্নার আলো পড়ে ঝলমল করছে।

আমাদের চলার পথের বামদিকে দেবদারু, আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি আর বাঁশঝাড়ের বাগান। ডানদিকে খোলা মাঠ। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ন্যাড়া-মাথা কলাগাছ দাঁড়িয়ে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা মামাবাড়ির গ্রামের কাছাকাছি চলে এসেছি। ভারি সুন্দর জ্যোৎস্নামাখা রাত। এমন সময় দক্ষিণা বাতাসের এলোমেলো ঝাপটা এসে আছড়ে পড়ে। বাগানের গাছগুলো দোল খেতে থাকে।

নিঃশব্দ রাত যেন হঠাৎ করে হৈ হৈ শব্দে মেতে ওঠে। ফাল্গুনের ঝরাপাতার সর সর শব্দ। শিশিরের টুপটাপ, বাঁশঝাড় থেকে কান্নার মতো কোঁকানো শব্দ ভেসে আসে। ঝাউগাছ যেন বাতাসের ছোঁয়ায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। মামার হাত ধরে আমি হেঁটে চলেছি। পাশে পাশে দাদা। হঠাৎ মামা আমার হাতটা জোরে চেপে ধরেন। থর থর করে কাঁপছেন। বাঁ হাত দিয়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরে তোতলাতে তোতলাতে বলেন, 'শা-শা- শাওন, ভূ-ভূ-ভূত।' ভয়ে আমি সিঁটকে গেছি। বুকটা দুরু দুরু করছে।

গলা শুকিয়ে কাঠ। কোন কথা বলতে পারছি না। মামার অজ্ঞান হয় হয় অবস্থা। দাদা এক ঝটকায় মামার হাত ছড়িয়ে নিয়ে বলে, ভয় পেয়ো না, মামা, আমি দেখছি। দাদা রাস্তার পাশের গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙে নিয়ে আসে। লাঠি হাতে নিয়ে মামাকে বলে, 'মামা, কই তোমার ভূত?'
মামা কাঁপা-কাঁপা হাত তুলে দেখান, 'ও- ও ওই যে।' আমিও মামার দেখানো ভূতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। সত্যি সত্যি একটা বিদঘুটে আকারের ভূত দাঁড়িয়ে আছে। সাদা ধবধবে শাড়ি পরা। মাথা নেই। বড় একটা জিব। জিবটা লকলক করছে। ওপরে তোলা দুটো হাত। যেন আমাদের ডাকছে।

ওই না দেখে আমার মাথা বন বন করে ঘুরতে লাগল। আমি মামাকে জাপটে ধরে রেখেছি। মামারও দেখি আমার মতো দশা। এরই মধ্যে দাদা ছুটে গিয়ে ভূতের কাছে হাজির। প্রথম লাঠি দিয়ে একে একে দুটো হাতই ভেঙে দেয়। এরপর পায়ে জোরে জোরে বাড়ি মারলে ভূতটা নুয়ে পড়ে। দাদা তখন চিৎকার করে আমাদের ডাকছে।' তোমরা এখানে এস। দ্যাখ, ভূতটা মেরে ফেলেছি।

আমি জানি ভূত কখনও মরে না। তাই মামার হাত ধরে ধরে ভয়ে ভয়ে এগোই। গিয়ে দেখি একটা কলাগাছ। সেই ভূত। আমার আর মামার যেন প্রাণ ফিরে এলো। মামাও হাসে, আমিও হাসি। হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যায়। দাদা বলল, 'ভূত দেখা এবং মারা সবই হল। এখন চল। নানাভাই আমাদের জন্য বসে আছেন।' ভোর হয় হয়। এমন সময় আমরা পৌঁছে গেলাম। দৌড়ে নানাভাইয়ের কোলে বসে বললাম, 'আমার জন্য তোমার মনটা কাঁদছিল?'

'হ্যাঁরে। তোকে না দেখলে আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না।' 'জানো নানা, আজ না আমরা ভূতের পাল্লায় পড়েছিলাম। দাদা না থাকলে আমাকে আর মামাকে তো তোমরা খুঁজেই পেতে না।' এ কথা শুনে নানাভাই তো হেসেই খুন। বললেন, 'ওটা তোদের চোখের ভুল।' এদিকে সব শুনে নানি তো মহা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ছুটে গিয়ে পানি পড়া নিয়ে এলেন। বললেন, 'ওদের তিনজনকে পানি পড়া খাইয়ে দিই। কী ভীষণ ব্যাপার, ভূতে যখন ধরেছে তখন এত সহজে ছাড়বে না। আবার সুযোগ পেলেই ধরবে।' আমি বলি, নানি, আগে শোন না।' একে একে সব কথা খুলে বললাম। নানি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। 'যাক বাঁচা গেল। এ যাত্রায় তোরা আসল ভূতের পাল্লায় পড়িসনি। তবে পড়তে কতক্ষণ? নে, একটু একটু করে পানি পড়া খেয়ে নে।'

নানাভাই তখন নানিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'শোনো, তোমার ওই জিনিস আর খাওয়ার দরকার নেই। এবারে ওদের ভুল ভেঙেছে। পৃথিবীতে ভূতটুত বলে কিচ্ছু নেই। আসলে ভূত হল আমাদের চোখের ও মনের ভুল।' নানি মুখ ঝামটা দিয়ে পড়া পানির বোতলটা হাতে করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন,।


The story of the tiger's power and Buddhi Cultivator



বাঘের দাপট আর বুদ্ধি চাষীর গল্প

এক বনে ছিল এক বাঘ। বাঘের ছিল ভীষণ দাপট। সুযোগ পেলেই সে বনের অন্য পশুদের মেরে খেয়ে ফেলত। সবাইকে বলত, সেই নাকি বনের রাজা।এমনি এক দিন সকালে বাঘ একটা হরিণ মারল। তারপর একাই খেয়ে ফেলল আস্ত হরিণটা। খেয়েদেয়ে মনের সুখে বাঘ বেড়াতে বের হল। 
বনের যে পশুই বাঘের সামনে পড়ে সেই বাঘকে দেখে ভয়ে পালায়। বাঘ মনে মনে ভীষণ মজা পায়।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে বাঘ চলে এল বনের শেষ মাথায়। কাছেই একটা গ্রাম।

হঠাৎ দূর পাহাড়ের নিচে বাঘের চোখ পড়ে। পাহাড়ের নিচে গাঁয়ের মাঠে এক মোষ শান্তভাবে ধীরে ধীরে লাঙল টানছে। লাঙলের পেছনে এক চাষী। চাষী থেমে থেমে কী বলে যেন চিৎকার করে চলছে। হাতে ধরা লাঠিটা দিয়ে মাঝে মাঝে মহিষটাকে পিটোচ্ছে। বাঘ তো ভারি অবাক। সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এতবড় একটা মহিষকে ঐ রোগাপটকা লোকটা কোন সাহসে পিটোচ্ছে? ইয়া বড় শিংওয়ালা মহিষ তো ইচ্ছে করলেই চাষী লোকটিকে গুঁতো মেরে ফেলে দিতে পারে! কিন্তু তা না করে সে শুধু মার খাচ্ছে। 
বাঘের কৌতূহল হল। সে পায়ে পায়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নামতে লাগল। চাষীও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। লাঙল চালানো থামিয়ে সেও এক গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসে।
বাঘ ততক্ষণে মহিষটার কাছাকাছি চলে এসেছে। মহিষকে একা পেয়ে বাঘ জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা ভাই, ঐ পুঁচকে লোকটা তোমাকে মারছে আর চেঁচামেচি করছে। 
আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছ। কেন বল তো? তুমি তো ওর চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তোমার ধারালো শিং দিয়ে তুমি ওকে ছিঁড়ে ফেলতে পার।

তা না করে তুমি ওকে ভয় পেয়ে এসব সহ্য করছ কেন মহিষ বাঘের দিকে করুণ চোখে তাকালো। দুঃখের সঙ্গে বলল, 'চাষী লোকটা ছোটখাট ঠিকই। কিন্তু তুমি কি ওর বুদ্ধির খবর রাখ?' বাঘের আরও অবাক হওয়ার পালা। সে জিজ্ঞেস করল, 'বুদ্ধি! বুদ্ধি আবার কী?'মহিষ কিছুটা বিরক্ত হল। আসলে ও নিজেও ঠিক জানে না, বুদ্ধি কী? সে বিশ্বাস করে, চাষীর এরকম কোনো শক্তি জানা আছে। 
কিন্তু বাঘের কাছে তা সে স্বীকার করতে চাইল না। তাই সে বলল, 'তুমি বরং চাষীকেই সে কথা জিজ্ঞেস করো গিয়ে। বাঘ এবার চাষীর কাছে এগিয়ে গেল। 

চাষী তখন আরামে হুকোয় টান দিচ্ছে। বাঘ দেখে চাষী ভয়ে কিছুটা সিঁটিয়ে গেল। কিন্তু বাঘ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল না। বাঘ জিজ্ঞেস করল, 'তোমার মোষ বলেছে, তোমার নাকি বুদ্ধি আছে। সেটা কি সত্যি?' চাষী বুঝল, এর মধ্যে অন্য কোনো ব্যাপার আছে। তা না হলে বাঘ তাকে খাওয়ার কথা না ভেবে এ প্রশ্ন করছে কেন? সে বলল, 'হ্যাঁ, সত্যি।'বাঘ বলে উঠল, 'সেটা দেখতে কেমন? আমায় একবার দেখাবে? 
তোমাকে দেখাতে আমার কোনো অসুবিধে নেই। তবে মাঠে পড়ে হারিয়ে যাবার ভয়ে আজ আমি ওটা বাড়িতে রেখে এসেছি।' উত্তরে বলে চাষী। বাঘ বুদ্ধি দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। 

বলল, 'তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে ওটা নিয়ে এসে আমাকে দেখাও।' চাষী বলল, 'নিশ্চয়ই তোমাকে তা দেখাতে পারি। কিন্তু আমি ওটা আনতে গেলে তুমি যদি আমার মোষটাকে ধরে খেয়ে ফেল? বাঘ বলল, 'না, ওকে আমি মারব না। আজ সকালে একটা আস্ত হরিণ খেয়ে বেরিয়েছি। আমার এখন খিদে নেই। পেট ভরা।' চাষী একটু ভাবল। তারপর বলল, 'ঠিক আছে। তোমাকে যদি ঐ গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখতে দাও, তবেই আমি নিশ্চিন্তে বাড়ি গিয়ে বুদ্ধি এনে দেখাতে পারি।' বাঘের আর তর সইছিল না। 

বুদ্ধি জিনিসটা কেমন তা আজ তাকে দেখতেই হবে। তক্ষুনি সে চাষীর কথায় রাজি হয়ে গেল। 
চাষী তাড়াতাড়ি একটা মোটা দড়ি দিয়ে বাঘকে গাছের সাথে বেঁধে ফেলল। তারপর কতগুলো শুকনো পাতা আর গাছের ডালপালা এনে জড়ো করল বাঘের চারপাশে। 
সে গুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাঘকে বলল, 'এবার দেখ। এই হচ্ছে আমার বুদ্ধি।
দাউদাউ করে বাঘের চারপাশে আগুন জ্বলতে লাগল। 

আগুনের শিখা উঠে গেল অনেক উচুঁতে। বাঘের গরম লাগতে লাগল। বাঘ ছট্‌ফট্ করতে শুরু করল। কিন্তু দড়ি দিয়ে বাঁধা বাঘের নড়াচড়ার উপায় ছিল না। আগুনের তাপে তার শরীর প্রায় ঝল্ল্সে যাচ্ছিল।
একসময় বাঘের গায়ের দড়িগুলো আগুনে পুড়ে কালো কালো দাগ পড়ে গেল। 
বাঘ মুক্ত হল বটে, কিন্তু আগুনে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে সে বনের পথে পালিয়ে গেল। সেই থেকে বাঘের গায়ের দাগ হয়ে গেল কালো আর বাদামি।

খুকুর সাধ | The dog is sad Bangla Golpo 2024


খুকুর সাধ

আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে বড় একটা মাটির পথ। ঠিক পশ্চিমে বাড়ির কোল ঘেঁষে ফসলের মাঠ। পথটি এঁকেবেঁকে মাঠের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। পথের শেষ কোথায়? হয়তো বা তেপান্তরের মাঠে গিয়ে। সেই মাঠ পেরিয়ে গেলেই বুঝি বা এক সোনার দেশ। যেখানে রাজা আছে, রাজকন্যা আছে। হাতি, ঘোড়া, সৈন্যসামন্ত স-ব আছে। হাজার দুয়ারি শ্বেতপাথরের রাজবাড়ি। সেখানে দিঘির জলে পদ্ম ফোটে। 
রাজার বাগানে ক-ত রকমের থরে থরে সাজানো ফুলের বাহার। রাজকন্যে সাথীদের নিয়ে ফুলবাগানে ঘুরে বেড়ায়। সখীরা মিলে গান গায়।

এমন সময় মায়ের ডাক, 'খুকু, কোথায় গেলি! জলদি আয়, ভাত জুড়িয়ে গেল যে।
দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসি। ভাত খেতে খেতে মাকে বলি, 'আচ্ছা মা, বাবা আসেন না কেন? আমার না, বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। মা কোনো কথা না বলে আমার গরম ভাতে বাতাস দিতে থাকেন। আমি আর কোনো কথা বলি না। মার কাছে শুনেছি, ১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন করার জন্য বাবা যুদ্ধে যান। তারপর বাবার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমার বিশ্বাস, বাবা আছেন। একদিন তিনি ঠিক ঠিক ফিরে আসবেন।

বিকেলে গাছের ছায়া পড়ে পথের ওপর। আমি তখন গিয়ে দাঁড়াই। পথটা পূর্ব দিক ধরে গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। অনেক, অনেক দূর।পথ যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেইখানে বুঝি আছে এক শহর। বাবা ঠিক সেই শহরে থাকেন। আমি ভাবি, হাঁটতে হাঁটতে একদিন সেই শহরে চলে যাব। বাবার কোলে বসে বলব, বাবা, তুমি এত দূর শহরে থেকো না। বাড়িতে চলে এস। তুমি রোজ রোজ গল্প বলবে, আর আমি শুনব। বাবা! তোমাকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। ভাবতে ভাবতে কখন যেন সময় চলে যায়। শেষ বিকেলের আলোর রেখা যাই যাই করে। মসজিদ থেকে মাগরেবের আজান ভেসে আসে।

এমনি করেই দিন কাটে। মা বললে কাজে সাহায্য করি। বন্ধুদের বাড়িতে চলে যাই খেলা করতে। ওরাও আসে। পুতুল খেলি। চড়ুই- ভাতি করি। আমাদের বাড়িটা বেশ বড়। পুকুরের ওপারে বড়সড় একটা জঙ্গল। সেখানে অনেক রকম বুনোফল ধরে। ছোট ছোট গাছে টুনটুনি, দোয়েল আর বুলবুলি বাসা বাঁধে। সেখানে বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে যাই। একা যাই না। কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। সকালে আর বিকালে জঙ্গলটায় পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরা থাকে। দুপুরবেলায় কেমন যেন চুপচাপ ঝিমোয়। মাঝেমধ্যে ঘুঘুর একটানা ডাক শোনা যায়। রাতের জঙ্গল কেমন যেন শান্ত, নির্জন।

একদিন আমার বন্ধুরা এসে বলল সামনের মাস থেকে আমরা স্কুলে ভর্তি হব। তুই হবি না?
আমি এ কথার কোনো জবাব দিই না। সকলের মধ্যে একটা উত্তেজনা। সাজ সাজ রব। নতুন জামা এসেছে, খাতা এসেছে। রাতে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে বলি, 'মা, সামনের মাসে আমার বন্ধুরা স্কুলে ভর্তি হবে। আমিও হব।' মা আমাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
'সামনের মাস তো আসুক। তখন দেখা যাবে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। নতুন জামা আসে না। খাতা আসে না। মাও কিছু বলেন না। আমি মায়ের কষ্টটা কেমন করে যেন টের পাই। 
আমিও কিছু বলি না। শুধু মনের মধ্যে একটা আশা নিয়ে দিন গুনতে থাকি।

আমার বড় বোনের রেখে যাওয়া একটা স্লেট ঘরে ছিল। স্লেটটা নিয়ে পাশের বাড়ির দিনু আপার কাছে মাঝে মাঝে যেতাম। দিনু আপা আমাকে পড়তে, লিখতে ও অঙ্ক করতে শেখাতেন। ঘরে বসে আমি আমার অবসর সময়ে যা মনে আসত তাই লিখতাম। বাবার কাছে আমি প্রায়ই চিঠি লিখি। আমার মনে হয় বাবা দূর শহরে বসে আমার চিঠিগুলোর কথা শুনতে পান। বাবার চেহারা দেখেছি কিনা মনে নেই। 
কিন্তু আমার মনে বাবা ছিলেন অনেক লম্বা, সুন্দর একটি মানুষ। মনে তাঁর অনেক মায়া। আমি যেমন তাঁকে ভালোবাসি, তিনিও তেমনি আমাকে খুব ভালোবাসেন। বাবা আসেন না। তবুও মনে হয়, বাবা সারাক্ষণ আমার আশেপাশেই আছেন। আমার বন্ধুরা স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়। তারা আমাকে স্কুলের গল্প বলে। নতুন নতুন বন্ধুদের নাম বলে। আমি শুধু শুনি। মনের মধ্যে চাপা একটা দুঃখ নিয়ে থাকি। 
মাকেও আর বিরক্ত করি না। স্লেটে আমি বাবার কাছে বেশি বেশি করে চিঠি লিখি। দিনু আপার কাছে যাই। অঙ্ক শিখি। পড়া শিখি আর লিখি।

মাস প্রায় শেষ। স্কুল পুরোদমে চলছে। একদিন মা আমাকে বললেন, 'আমার সঙ্গে চল!"
আমি বলি, 'কোথায় মা?  "স্কুলে।'
পরিষ্কার একটা জামা পরে মায়ের সঙ্গে চললাম। মা আমাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকলেন। আমি স্কুলের বারান্দা দিয়ে দেখি ছেলেমেয়েরা ক্লাসে ক্লাসে বসে আছে। সারা স্কুল জুড়ে আনন্দের পরিবেশ। মাঠটা সবুজ ঘাসে ঢাকা। স্কুলের সীমানা ঘেরা পাঁচিল। মাঠের চারপাশ দিয়ে ফুল ফুটে আছে।

এমন সুন্দর স্কুল! মা কি সত্যি সত্যি আমাকে এই স্কুলে ভর্তি করে দেবেন? মনের মধ্যে তবুও একটুখানি আশা। মা যখন এসেছেন, একটা কিছু হবেই। এমন সময় প্রধান শিক্ষকের ঘরে আমার ডাক পড়ল। তিনি আমাকে স্নেহের সুরে বললেন, 'এখানে পড়বে?' আমি শুধু মাথা নেড়ে বললাম, 'জি!
স্কুলের খাতায় আমার নাম উঠল। নিয়মিত আসি। দিনু আপার কাছে পড়ার ফলে ক্লাসের বইগুলো আমার কাছে সহজ মনে হয়। শিক্ষকরা আমাকে আদর করেন। উৎসাহ দেন। আমি পড়াশুনায় ভালো- এমন একটা সুনাম স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে।

আমাদের অভাব আছে। মা বুঝতে দেন না। খুব হিসেব করে চলেন। তবুও টান পড়ে। জামাকাপড়ে। খাতাপত্রে। বই কিনতে। কোনোমতে চলে যায়। অন্যের সহযোগিতায়, বই ধার করে প্রতিদিনের পড়া ঠিকমত করি। বাবাকে প্লেটে লিখে আমি জানিয়েছি আমার খুব পড়াশুনা করতে ইচ্ছে করে। 
বাবাকে কথা দিয়েছি আমি পড়ব, অ-নে-ক পড়ব, অ-নে-ক। কিছুদিন হল আমার প্রায়ই স্কুল কামাই হয়। অভাবের কারণে। বাড়ির নানা কাজের জন্য। একদিন সকালে হেড স্যার আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। আমাকে ডাকলেন, 'খুকু, এদিকে এসো।' আমি ভয়ে ভয়ে কাছে যাই। স্যারের একটা হাত আমার মাথায়। মাকে ডেকে বললেন, 'খুকুকে এখন থেকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাবেন। ওর পড়াশুনার সব দায়দায়িত্ব আমাদের।

মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে দিনু আপাকে খবরটা দিয়ে আসি। মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। 
মায়ের মুখে আনন্দের হাসি। কত দিন মায়ের এমন হাসি দেখি না। গাছের পাতায় পাতায় তখন সকালের সূর্য আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। ঝকঝকে সুন্দর সকালের মিষ্টি আলোয় ভরে গেছে আমাদের সারা বাড়ি। আমি ঘরে ঢুকে স্লেটটা নিয়ে বাবাকে চিঠি লিখতে বসি।

স্কুলে যাই। আমার সবটুকু সময় যেন আনন্দে ভরা। পড়ি, খেলা করি। পথে গিয়ে দাঁড়াই। বাবার জন্য অপেক্ষা করি। স্লেটে প্রতিদিন চিঠি লিখি। এবার আমার পাঠশালার শেষ বছর। বৃত্তি পরীক্ষা দেব। খুব করে পড়ছি। একদিন পরীক্ষাও শেষ হয়। এখন ফলের জন্য অপেক্ষা। যথাসময়ে ফল বের হয়। 
বৃত্তি পেয়েছি। হেড স্যার বাড়িতে এসে মাকে বলেন, 'খুকু আমাদের মান রেখেছে। ওর যতদূর ইচ্ছে পড়বে। গ্রামের সবাই মিলে খুকুর লেখাপড়ার ভার নিয়েছে। মায়ের মুখে হাসি আর আনন্দের অশ্রু টলটল করছে। আমার সকল খুশি জানানোর জায়গা তো মাঠ আর পথটা। মাঠে ছুটে যাই। যতদূর চোখ যায় হলুদ সর্ষে ফুলে মাঠ ভরে আছে। শেষ বিকেলের সোনার আলোয় ফুলগুলো যেন সোনায় মোড়ানো বলে মনে হয়।

চারিদিকে মৌমাছিদের গুন গুন গান। সন্ধ্যা হয় হয়। তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসি। আলোটা জ্বেলে নিয়ে বাবাকে চিঠি লিখতে বসি। বাবাকে বৃত্তি পাওয়ার কথা জানাই। আমার ভালো লাগার কথা বলি। বাবাকে লিখি তাড়াতাড়ি চলে আসতে। মনের মধ্যে জমে থাকা কথা লিখতে লিখতে স্লেটটা ভরে যায়। 
মা রান্না ঘর থেকে ডাক দেন, 'খুকু খেতে আয়। খেতে খেতে মাকে বলি, 'মা আমি কিন্তু অনেক পড়ব। অনে-ক। তুমি পাশে থাকলে আমি স-ব পারব।

স্বামী মারা গেছে তাই ননদের সাথে প্রতারণা | ননদের সাথে প্রতারণা | heart touching love story

 

স্বামী মারা গেছে তাই ননদের সাথে প্রতারণা

প্রোপাইটার :- MD MOUAJJAM HUSSAN নিবেদিত :- জীবন আহমেদ পরিচালনায় :- আবুল হোসেন খোকন রচনায় :- আকতার হোসেন

Review :- স্বামী মারা গেছে তাই ননদের সাথে প্রতারণা" করা হল

একটি চ্যানেল যেখানে পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণরূপে সহানুভূতি, সহানুভূতি এবং আলোচনা প্রদান করা হয়। চ্যানেলটির লক্ষ্য হল অভিভাবকের অস্তিত্বে আত্মপ্রকাশ করা, সমস্যার সমাধান এবং পাঠকদের মধ্যে পরিচিতি এবং বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো।


এই চ্যানেলে আমরা প্রেমের গল্প, চিন্তার গল্প, পরিবার ও সমাজের প্রতিষ্ঠান, চারিত্রিক গল্প, এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে আলোচনা করি। আমরা প্রেমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বাধা, সমস্যা, সঙ্কট ও আপাতত হয়ে থাকা সমস্যাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করি, যা সমাজে আমাদের সহিংসতা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি চিন্তামুলক সময় উৎপন্ন করতে সাহায্য করতে পারে।


চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা অনেক প্রকারের সমস্যার সমাধান, মানবিক সহানুভূতি এবং চিন্তামুলক আলোচনা প্রদান করি যা পাঠকদের আত্মবিশ্বাস এবং বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে।

চ্যানেলে আমরা পাঠকদের মধ্যে পরিচিতি ও বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে প্রত্যেক মানুষের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি।

আমরা প্রতিদিন নতুন এবং আকর্ষণীয় লেখা প্রকাশ করি, যা পাঠকদের মনোরম এবং আনন্দমূলক করে।


চ্যানেল "স্বামী মারা গেছে তাই ননদের সাথে প্রতারণা" আপনাদের প্রতি উৎসাহবর্ধক এবং সাহিত্যিক রচনার মাধ্যমে প্রেমের মহাকাব্যগুলির গল্প বিশেষত আনন্দময় হয়ে উঠে। এখানে প্রেমের অনুভূতি, ভালোবাসার আলো, ও সত্যিকারের সুখের গল্প আপনাদের প্রতিদিন প্রতিদিন অপেক্ষা করছে।


চ্যানেল "স্বামী মারা গেছে তাই ননদের সাথে প্রতারণা" সহ হতে প্রেমের আদর্শ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সাজুক আমাদের জীবন! 📖💕

ফুল ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া হয়েছে  👉 Youtube Channel Link 👇👇👇

👉  https://www.youtube.com/@techofficialyt95


পাখি হত্যাকারী | Bird killer Bangla Golpo 2024


🐦 পাখি হত্যাকারী 🔪

দূর আকাশের কোলে হালকা একটা কালো রেখা। পাখির দল ছুটে আসছে। ঝাঁকে ঝাঁকে। দেখে মনে হয় যেন একখন্ড কালো মেঘ উড়ে আসছে। মকবুল মিয়ার মনে ভয়, যদি পাখিগুলো এখানে না বসে। বাড়ির ওপর দিয়ে চক্কর দিচ্ছে। শোঁ-শোঁ শব্দ। প্রথমে একটা, তারপর একে একে সকলেই সারা গাছপালা জুড়ে বসে যায়। কিচির মিচির শব্দ। বুঝিবা খুশির জোয়ার ছুটেছে। ওরা পানকৌড়ি। অতিথি পাখি। হিমালয়ের ওপারে সেই দূরের সাইবেরিয়া নামের জায়গা থেকে আসে। শীত পড়ার আগে আগে আসে, আবার গরম পড়লে চলে যায়।

আজ থেকে পনেরো বছর আগে ওরা এই বাড়িতে প্রথম আসে। তখন সংখ্যা ছিল দুই-তিনশ'। বাড়তে বাড়তে এখন কয়েক হাজার। প্রথম প্রথম মকবুল মিয়া খুব বিরক্ত হতেন। তাড়িয়ে দিতে চাইতেন। মা তখন বেঁচে আছেন। তিনি পাখিগুলোকে আগলে রাখতেন। সারা উঠোন, গাছতলা, টিনের ছাদ ওদের সাদা সাদা মলে ভরে যেত। দুর্গন্ধ ছড়াতো। যখন-তখন ঘরে ঢুকে ধান বা খাবার খেয়ে ফেলতো। তিনি একা হাতে সামলাতেন। ঘরদোর, উঠোন, গাছতলা নিজে পরিষ্কার করতেন। পাখিগুলোকে কিছু বলতেন না। মকবুল মিয়ার মায়ের কাছে পাখিগুলো ছিল সন্তানের মতো। ধীরে ধীরে পাখিগুলো গ্রামের সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আশ্বিন মাস আসলেই গ্রামবাসী মিলে বিকেল বেলা হাওড়ের ধারে প্রতিদিন অপেক্ষা করে, কখন পাখিগুলো আসবে। এখন পাখিগুলো গ্রামের সকলের সাথী, বন্ধু ও অতিথি।
মকবুল মিয়াদের বাড়িতে আজ খুশির দিন। বিকেল হতেই গ্রামের ছোটবড় অনেকেই খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। আজ এ বাড়িতে সবাই মিলে আনন্দ করবে। গ্রামের যত শিশু আছে আজ সন্ধ্যাবেলায় তাদের পড়তে বসতে হবে না। এই সন্ধ্যায় তাদের ছুটি। অনেকেই উঠোনে জড়ো হয়েছে। 
মকবুল মিয়ার দশ বছরের মেয়ে কমলা আর তের বছরের ছেলে শিলু সকলের দেখাশুনা করছে। উঠোনে বড় বড় মাদুর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদুরে বসে সবাই পাখি দেখছে। 
মকবুল মিয়ার বাবা ডালিম মণ্ডল এসে উঠোনে বসেছেন।

এ বাড়িতে তিনিই তো প্রথম পাখিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ডালে ডালে ছেয়ে গেছে পাখি। নির্ভয়ে বসে আছে। কেউ ডানা ঝাপটায়, কেউবা ঠোঁট দিয়ে গা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। 
কেউ কেউ এ ডাল থেকে ও ডালে গিয়ে বসছে। একটানা কিচিরমিচির শব্দ।
কমলার মা রান্না ঘরে খুব ব্যস্ত। পাড়ার মেয়েরাও তাকে সাহায্য করছে। বড় বড় হাঁড়িতে পায়েস রান্না হচ্ছে। গত দশ বছর ধরে ডালিম মণ্ডল এই দিনে গ্রামের সকলকে মিষ্টিমুখ করান। বড়রা কলাপাতা কাটতে ব্যস্ত। কলাপাতায় পায়েস খেতে দেওয়া হবে।

উঠোনে হ্যাজাক জ্বালানো হয়েছে। মাদুরে বসে সবাই হাপুসহ্রপুস শব্দে পায়েস খাচ্ছে। শিশুদের হৈ চৈ, বড়দের হাঁকডাক। সে এক মহা হুলস্থুল কাণ্ড। সন্ধ্যা শেষ হয়েছে বেশ আগে। একে একে সবাই চলে গেছে। কমলার মা উঠোনে ছড়ানো-ছিটোনো কলার পাতা গুছিয়ে রাখছেন। কমলা, শিলু খুব খুশি। দুই ভাইবোন গল্পে মশগুল। মকবুল মিয়া গোয়াল ঘরে গরুছাগলগুলো দেখছেন। 
ডালিম মণ্ডল ধীরে ধীরে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন।

মনে পড়ছে তাঁর পনেরো বছর আগের কথা। প্রতিবেশী, গ্রামবাসী কেউই পাখিগুলোকে পছন্দ করত না। কত না উৎপাত করেছে। মকবুলের মা আর তিনি দুইজন মিলে রক্ষা করেছেন পাখিদের। আজ আর মকবুলের মা নেই। তিনি যেন পাখিদের প্রতি তাঁর যে মায়া তা সকল গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। প্রাণ দিয়ে সকলেই তাঁদের সহযোগিতা করে। দূর এলাকা থেকে কত লোক এই দিনে পাখি দেখতে আসে।কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার গভীর রাত। চারিদিকে নীরব নিশ্চুপ। সারা গ্রাম ঘুমে অচেতন। পাখিরাও ঘুমায়। মাঝে মাঝে শুধু ডানার ঝটপটানি শোনা যায়। 
হাওড়ের পানিতে চাঁদের আলোর ঝিকিমিকি।

মাঝে মাঝে টুপটাপ মাছের শব্দ ওঠে পানিতে। রাত প্রায় শেষ। বড়জোর ঘণ্টা দুয়েক বাকি। মকবুল মিয়ার ঘুম ভেঙে গেছে। জানালা দিয়ে ফুটফুটে জ্যোৎস্নার আলো ঘরে ঢুকেছে। ঠিক সেই সময় বটগাছের দিক থেকে খস খস পাতার আওয়াজ শুনতে পান মকবুল মিয়া। মনে হয় কেউ যেন সাবধানে পা ফেলে ফেলে আসছে। মকবুল মিয়া নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হন। পা টিপে টিপে একটু ঘুর পথে বটতলায় আসেন। একটা লোক বটগাছের ডালে বসা পাখির দিকে গুলতি তাক করে আছে।

মকবুল মিয়া লোকটাকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। চিৎকার করে ওঠেন। চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন মুহূর্তেই বেরিয়ে আসে। কারো হাতে লাঠি, কারো হাতে বল্লম বা সড়কি। লোকটা এই গ্রামেরই এক যুবক। নাম তার শুকুর। কেউ বলছে ওর হাত ভেঙে দাও। কেউ বলছে, না, দুই ঠ্যাং। কেউবা চায় পিঠমোড়া করে বেঁধে মনের সুখে পেটাতে। ঠিক তখন বাঁকা বেতের লাঠি হাতে ঠক ঠক করতে করতে ডালিম মন্ডল সামনে এসে দাঁড়ান। তাকে দেখে সবাই থেমে যায়। চুপচাপ, কোন শব্দ নেই।

সকলের মধ্যেই কৌতূহল। এখন কী হবে? ফিস ফিস করে সকলে কথা বলছে। ডালিম মণ্ডল শুকুরকে বসতে বললেন। ভোর পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। কথা বলা নিষেধ। নড়াচড়া করা যাবে না।
ভোর হতে এখনও বেশ বাকি। নানান বয়সী পাহারাদারের দল উঠোনে বসে আছে। 
কমলা ও শিলু দলের মধ্যে বসা। কমলা বলে, 'চুপ করে বসে না থেকে বরং সকলে মিলে গান গাই।' কমলার কথায় সকলেই খুশি। গান শুরু হয়।

গানে গানে কখন যেন ভোর হয়ে যায়। ডালিম মন্ডল লাঠি হাতে এসে উঠোনে দাঁড়ান। 
ডালিম মন্ডল শুকুরের দিকে তাকিয়ে বলেন, 'এমন সুন্দর পাখি মারতে তোমার কি হাত একটুও কাঁপল না? পাখিগুলো আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদের আশ্রয়ে থাকে। আমরা সকলেই ওদের ভালোবাসি। এই অন্যায় কাজের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। যাতে সারা জীবন তোমার মনে থাকে।
এই কথা বলে ডালিম মণ্ডল শুকুরের গলায় গুলতিটা মালার মতো ঝুলিয়ে দিলেন। শিশুদের ডেকে বললেন, 'ওকে এই ভাবে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে নিয়ে এস। আগে আগে শুকুর হাঁটে, পিছনে শিশুর দল। যেন এক মহা আনন্দের মিছিল। শিশুরা পিছন পিছন দল বেঁধে ছুটছে আর বলছে,
🐦পক্ষীঘাতক শুকুর  এ গ্রামের।

শিশুরা ছড়া কাটতে কাটতে গ্রাম ঘুরতে থাকে। মিছিল নিয়ে ছুটতে ছুটতে শিশুরা চোখের আড়ালে চলে যায়। এক সময় ওদের হৈ চৈ আর শোনা যায় না। ডালিম মণ্ডল লাঠিতে ভর দিয়ে একা দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবছেন সেই পনের বছর আগেকার কথা। এই সময় মকবুলের মা থাকলে খুব খুশি হত।

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

💓 গল্পটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না 💓

💘Don't forget to comment if you like the story💘