কুঁড়ো খাওয়া রাজা | King's Bengali story Bangla 2024

 


কুঁড়ো খাওয়া রাজা

এক দেশে এক রাজা ছিলেন। একদিন তাঁর ইচ্ছে হল দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা নিজের চোখে দেখবেন। কিন্তু কেমন করে যাবেন? রাজপোশাকে বের হলে তো সকলেই তাকে চিনে ফেলবে। অনেক চিন্তার পর অতি সাধারণ পোশাক পরে তিনি বের হলেন। 
সঙ্গে নিলেন এক বিশ্বাসী পেয়াদা। হাঁটতে হাঁটতে রাজা শহরের বাইরে এক গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
গ্রামের কৃষক, কামার, কুমোর, তাঁতি সকলেই যার যার কাজে ব্যস্ত। হাসিখুশির মধ্য দিয়ে নিজের নিজের কাজ করছে। কারো কোনো দুঃখ নেই। শিশুরা হাসছে, খেলছে। আবার মনোযোগ দিয়ে পাঠশালায় পড়াশোনা করছে। রাজা নিজের চোখে তাঁর দেশের মানুষের অবস্থা দেখে মহাখুশি। 
রাজা তাঁর পেয়াদাকে ডেকে বললেন, 'চল হে, এখন ফেরা যাক।”


রাজা ফিরে চলছেন তাঁর রাজবাড়ির দিকে। ফেরার পথে দেখেন, এক বুড়ি উঠোনে বসে কুলো দিয়ে চাল ঝাড়ছে। রাজা উঠোনের ধার দিয়েই যাচ্ছিলেন। 
চালের কুঁড়োর গন্ধ চারদিকে ভুর ভুর করছে। রাজার খুব ভাল লাগল। রাজা পেয়াদাকে ডেকে বললেন, 'এই কুঁড়োর গন্ধ আমার খুব ভালো লাগছে । 
তুমি যেমন করে পার এই চালের কুঁড়ো জোগাড় কর।”
রাজার এ আদেশ শুনে পেয়াদা বলল, 'মহারাজ, আপনি এই তুচ্ছ কুঁড়ো দিয়ে কী করবেন ?
রাজা বললেন, “আহা! এই সুগন্ধ কুঁড়ো না জানি কত মজা! আমি কুঁড়ো— খাবো!" বলেন খাদ্য ।


"তা হোক, এমন সুগন্ধ খাবার আমি পাবোই।'
কী আর করা। মহারাজের আদেশ পালন করে পেয়াদাটি এক গামলা কুঁড়ো এনে হাজির করল।
কুঁড়ো দেখে রাজাতো মহাখুশি। একটা ঝোপের আড়ালে বসে রাজা মহানন্দে কুঁড়ো খেতে লাগলেন। '
খাওয়া শেষ করে রাজা বললেন, "আহা! এমন মজার খাবার আমি সারা জীবনেও খাইনি! তবে, সাবধান। 
এই বাওয়ার কথা কেউ যেন না জানে। জানলে তোমায় শূলে চড়াবো


রাজা সব কিছু দেখেশুনে, কুঁড়ো খেয়ে রাজবাড়িতে ফিরে এলেন। রাজকার্য নিয়ে আবার আগের মত দিন কাটতে লাগলো। রাজা তো আপন কাজে ব্যস্ত। কিন্তু পেয়ালার তো দিন কাটে না। রাজার কুঁড়ো যাওয়ার কথা বলতে বারণ। সে শুধু উসফুস করে, কিন্তু প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। 
এইভাবে কথা চেপে রাখতে রাখতে তার পেট উঠল ফুলে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পেট খারাপ হয়ে গেল। সারা দিনরাত ঘরের মধ্যে পায়চারি করে আর মনে মনে বলে, 'আমাদের মহারাজ কুঁড়ো যায়।"
বিড় বিড় করেও বলতে পারে না। পাছে কেউ শুনে ফেলে। শুনে ফেললেই তো তার জীবন শেষ।
নাহ, এভাবে আর থাকা যায় না। পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ঢপ ঢপ শব্দ করে। কবে না আবার ফেটে যায়। তাকে কোথাও না কোথাও গিয়ে এ কথা বলতেই হবে


ঠিক করল গভীর জঙ্গলে গিয়েই বলবে। ভাবনামতো একদিন বনে গিয়ে হাজির হল। নীরব বন। গাছের পাতাগুলোও নড়ছে না। কথাটা বলার জন্য যেই না হাঁ করেছে ঠিক তখনই পাতার খস খস শব্দ ভেসে আসে। পেছনে ফিরে দেখে এক কাঠুরে। কথা আর বলা হল না। ফিরে এল।
কোনো উপায় না পেয়ে পর দিন সে নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে গেল। বড় নদী, মাঝনদীতে সহজে কেউ আসে না। নদীর মাঝখানে গিয়ে হাল তুলে রেখে সে আয়োজন করছে কথাগুলো বলবে। এমন সময় অনেকগুলো জেলে নৌকা তার আশেপাশে এসে জড়ো হল। 
কী আর করা! এখানেও কথা বলা হল না। বাড়ি ফিরে গেল। মনে শান্তি নেই। পেট নিয়ে চলাফেরা কষ্ট। রাজার কাজও ঠিকমতো করতে পারে না।


জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে দেখে বিশাল এক গাছ। আশেপাশে কোনো জনমানুষ নেই। গাছের গুঁড়িতে একটা গর্ত। এমন জায়গা দেখে সে মহাখুশি। গাছের গর্তের মধ্যে মুখ রেখে এত দিনকার চেপে রাখা কথা বলতে লাগল: "আমাদের মহারাজ কুঁড়ো খায়, আমাদের মহারাজা কুঁড়ো খায়। 
যেই না বলা, অমনি তার পেট ফোলা চলে গেল। আবার আগের মতো সে এখন ভাল। মনের খুশিতে রাজার কাজে মন দিল।রাজবাড়ির সামনে বিশাল এক ঢোল। এই ঢোল পিটিয়ে শহরবাসীদের সময় জানানো হয়। একদিন ঢোলটি বাজাতে গিয়ে ছিড়ে গেল। রাজা তো রেগে আগুন।


হলে সবার গর্দান যাবে। অমন বিশাল একটা ঢোল বানাতে তো বড় গাছের গুঁড়ি দরকার। দিকে দিকে গাছের খোঁজে লোক ছুটলো। অবশেষে গাছও পাওয়া গেল। 
রাজ্যে এত বড় গাছ আর নেই। এই গাছের গর্তেই পেয়াদা রাজার কুঁড়ো খাওয়ার কথা বলে পেটের ভার মুক্ত করেছিল। দেশের সবচেয়ে বড় কারিগর এল। ঢোল বানানোর মহা আয়োজন চলছে। তিন দিনের মধ্যেই ঢোল বানানো শেষ। রাজা আদেশ দিলেন, নতুন ঢোল বাজানোর দিন উৎসব হবে। মন্ত্রী, পাইক- পেয়াদা, দেশের প্রজা সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হল। রাজার গুরু দিনক্ষণ ঠিক করলেন। ভোরের প্রথম আলো ফোটার মুহূর্তেই রাজা সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে বাড়ি অপেক্ষা করছে।


 রাজগুরু সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাত তুললেই রাজা সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে বাড়ি দেবেন। 
রাজা গুরুর দিকে তাকিয়ে আছেন। গুরু হাত তুললেন। রাজা মুহূর্তমাত্র দেরি না করে সোনার কাঠি দিয়ে ঢোলে দিলেন বাড়ি। ঢোল দ্রিম দ্রিম শব্দ না করে। আওয়াজ তুলল: আমাদের রাজা কুঁড়ো খায়। আমাদের রাজা কুঁড়ো খায়।


Similar Videos

0 comments: