দৈত্য প্রজাপতির গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দৈত্য প্রজাপতির গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

দৈত্য প্রজাপতির গল্প | The Story Of monster butterfly 2024

 


দৈত্য প্রজাপতি

ফেন্টু মামা আর আমি। যাচ্ছিলাম সিলেট। বেড়াতে। সিলেট জেলায় ঢুকতেই রাত্রি হল। অন্ধকার রাত। দুপাশে ছোটবড় পাহাড়। আবছা দেখা যাচ্ছে।তার মধ্য দিয়ে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে। এমন সময় রেলগাড়িটা হঠাৎ থেমে গেল। বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেল, গাড়ি আর চলে না।
সবারই এক কথা, চলছে না কেন? ফেন্টু মামা বললেন, 'এর আগে তিনবার থেমেছে। কিন্তু এবারের মতো এত দেরি তো করেনি।' জানালা দিয়ে সবাই সামনে দেখার চেষ্টা করছে। কিছুই বোঝা গেল না। ফেন্টু মামা আমাকে বললেন, 'একটু দেখে আসি ব্যাপারটা কি।' বলামাত্রই বগির মাঝের রাস্তা দিয়ে মামা এগোতে লাগলেন। অনেকক্ষণ পরে তিনি ফিরলেন। ইঞ্জিন ঘরের লোকজনের সাথে মামার কথা হয়েছে। একটা বিরাট দৈত্য নাকি বারবার রেলগাড়ি থামাতে বলছে। এতক্ষণ চালক ভয়ে ভয়েই রেলগাড়ি চালিয়েছে। বিপদ থাকায় এর আগে তিনবারই থামাতে হয়েছে। কিন্তু এবার মহাবিপদ। 

রেল লাইনের দুপাশে দৈত্যের দু'পা, আর দু'হাত ওপরের দিকে। হাত নাড়ানো দেখলে মনে হয়, পাহাড় ভেঙে ফেলবে।আশ্চর্যের বিষয়, রেলগাড়ি চললে দু'হাত নেড়ে থামতে বলে, আবার থামলে চুপচাপ। ফেন্টুমামা এসে যখন বলছিলেন, তখন বগির সবাই ভয়ে একেবারে জড়োসড়ো। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি। বরং দৈত্যটাকে নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে করছিল।

মামার কানে ফিস্ফিস্ করে বললাম, 'মামা, তুমি নিজে দেখেছ?' মামা বললেন, 'নারে, বাপু, না।' মামাকে বললাম, 'চল না মামা, দৈত্যটা দেখে আসি।' আমার কথায় ফেন্টু মামা ভয়ে ভয়ে রাজি হলেন। আমাদের সাথে ওই বগির কয়েকজন যাত্রীও গেলেন। এক বগি থেকে আর এক বগি, এমনি করে একেবারে সামনের বগিতে গিয়ে সবাই থামলাম। রেলগাড়ি থেকে নামব, এমন সময় মামা হাত ধরে টেনে বললেন, 'সত্যিই দেখবি? না গেলে হয় না।' আমি বললাম, 'চলো তো, মামা।' মামা আবারও বললেন, 'বন্দুকটন্দুক কিছুই নেই।' আমি বললাম, 'বুদ্ধি তো আছে।' সবাই নামলেন। রেলগাড়ির সামনে যেতেই ফেন্টমামা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্যটাকে দেখে দিলেন এক ছুট।

মামা ও অন্য যাত্রীদের পড়িমড়ি দৌড় দেখে রেলগাড়ির একজন চালক এগিয়ে এলেন। আমাকে দেখে বললেন, 'কোথায় যাচ্ছ, খোকা?' বললাম, 'দৈত্য দেখতে।' তার নিষেধ শোনার আগেই আমি একেবারে গাড়ির সামনে চলে গেছি। গিয়ে দেখি রেলগাড়ির হেডলাইটে একটি প্রজাপতি বসে আছে।

প্রজাপতির ছায়াটাই দেখতে বিশাল দৈত্য মনে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে সেটি উড়িয়ে দিলাম। প্রজাপতি উড়ে যেতেই দৈত্যটি মিলিয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। পারলে আমায় মাথায় নিয়ে নাচে। জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা খোকা, তুমি বুঝলে কী করে?' বললাম, 'এতো খুব সহজ ব্যাপার। হেডলাইটের ওপরে কিছু পড়লে তার ছায়া দূরে গিয়ে বড় দেখায়। একথা তো আমরা বিজ্ঞান বই পড়েই জেনেছি।' যাত্রীরা যার যার সিটে গিয়ে বসলেন। সবাই চিন্তামুক্ত। রেলগাড়ি আবার চলতে শুরু করল।