Pata Kumar Bangla Golpo লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Pata Kumar Bangla Golpo লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

পাতা কুমার | Pata Kumar Bangla Golpo

 


পাতা কুমার

পাশাপাশি দুটি ছোট রাজ্য। একটির নাম কাঞ্চননগর, অন্যটি চম্পকনগর। দুটি রাজ্যের সীমানায় একটি নদী। নাম দুধসাগর। নদীর তীরে দাদাভাই অপু চৌধুরীর বাড়ি। আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের ছায়াঘেরা বাড়িতে দাদাভাই স্কুল খুলেছেন। দাদাভাইয়ের স্কুলে খুব আনন্দ। পড়ালেখা, গানবাজনা, খেলাধুলা সবই হয়। দাদাভাইয়ের স্কুলে এলে কেউ আর যেতে চায় না। কাঞ্চননগরে আছে এক রাজপুত্র, নাম পাতাকুমার। চম্পকনগরে আছে এক রাজকন্যা, নাম চম্পাবতী। রাজ্য দুটির মানুষেরা খুবই নিরীহ। কেউ কারো সাথে গোলমাল করে না। কোনো অসুবিধা হলে দাদাভাইয়ের কাছে আসে। তিনি সব ঠিক করে দেন। দাদাভাইকে সবাই খুব মানে। হঠাৎ কী নিয়ে যেন দু রাজার মধ্যে গোলমাল দেখা দিল। কেউ কারো মুখ দেখে না। একজন আর একজনের নাম শুনতে পারে না। একজন একটা কাজ করল, তো অপরজন পাল্টা আরেকটা করে। কাঞ্চননগরের রাজা হয়তো দাওয়াত দিয়ে দুই শ লোক খাওয়ালো। অমনি চম্পকনগরের রাজা চার শত লোক খাইয়ে দেয়। রাজায় রাজায় গোলমাল থাকলেও দু রানীর মধ্যে কিন্তু খুব মিল। সব দেখেশুনে দাদাভাই ভাবলেন, এরকম করলে তো দুটি রাজ্যেরই ক্ষতি হবে। কাঞ্চননগরের এক মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, 'বাপু হে, তোমরা গোলমাল থামাও। মন্ত্রী বলে, 'না, দাদাভাই। চম্পকনগরের রাজা আমাদের অপমান করেছে।' কী অপমান করেছে, জিজ্ঞেস করলে আর বলতে পারে না। দাদাভাই বুদ্ধিমান। বললেন 'আচ্ছা, কাঞ্চননগরের দুটি স্কুল ভেঙে গেছে। ও দুটিকে দালান করে দাও দেখি। মন্ত্রী রাজাকে বললে রাজা স্কুল দুটি দালান করে দিলেন। খবর গেল চম্পকনগরে। রাজা শুনে বললেন, 'কী? ওরা দুটো স্কুল পাকা করছে? আমি চারটা নতুন স্কুল বানাবো। তাছাড়া, বেশি বেতন দিয়ে ভালো শিক্ষকও রাখব। দাদাভাই শুনে খুশি হলেন। দেখলেন প্রতিযোগিতা ভালোর দিকেই যাচ্ছে।
এদিকে পাতাকুমার আর চম্পাবতী দাদাভাইয়ের স্কুলে পড়া শুরু করে। ওরা দুজনেই পড়ালেখায় ভালো। দাদাভাই ওদের খুব ভালোবাসেন। দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে বছর যায়। পাতাকুমার আর চম্পাবতী বড় হতে থাকে। দুই রানী ভাবেন, চম্পাবতীর সাথে পাতাকুমারের বিয়ে হলে মন্দ হয় না। 
কিন্তু বেঁকে বসলেন চম্পকনগরের রাজা। কোনমতেই তিনি চম্পাবতীকে পাতাকুমারের সাথে বিয়ে দেবেন না। অনেক দিন পরের কথা। চম্পকনগরের রাজা ঘোষণা দিলেন রাজকন্যা চম্পাবতীর বিয়ে দেবেন। দুধসাগর নদীর তীরে বিশাল শামিয়ানা টানানো হল। রাজার পোষা হাতির পিঠে চড়বে রাজকন্যা চম্পাবতী। হাতির শুঁড়ে থাকবে মালা। নানা রাজ্য থেকে আসা রাজকুমারেরা সামনে বসে থাকবেন। 
হাতি যাকে মালা পরাবে তার সাথেই চম্পাবতীর বিয়ে হবে। রাজার এ ঘোষণায় সবাই চিন্তিত হলেন। হাতি কার না কার গলায় মালা পরায়। দাদাভাইয়ের কাছে এলেন কাঞ্চননগরের রানী। তাঁর ইচ্ছে পাতাকুমারের সাথে চম্পাবতীর বিয়ে হোক। মনের কথা খুলে বললেন দাদাভাই। দাদাভাই কিছুক্ষণ ভাবলেন। বললেন, পাতাকুমার যেন তার সাথে দেখা করে। অনুষ্ঠানের দিন নানা রাজ্যের কুমারেরা এসেছেন। কেউ বেলকুমার, কেউ ডালিমকুমার। আবার কেউ জ্যোতিকুমার, দ্যুতিকুমার, দুধকুমার, ঘিকুমার। পরনে বাহারি সাজ। পাতাকুমারের সাজ অন্যরকম। দাদাভাইয়ের বুদ্ধিমতে সে গলায় কলাপাতার মালা পরেছে। তা দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। হাতিকে সাজানো হয়েছে। শুঁড়ে ফুলের মালা। পিঠে রাজকন্যা চম্পাবতী। রাজপেয়াদা ঘণ্টা বাজালো। ঢংঢংঢং। হাতি সভায় ঢুকল। 
সবার বুক ধুকধুক করছে। কার না কার গলায় হাতি মালা দেয়। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাতি। 
সামনে বেলকুমার, দুধকুমার, জ্যোতিকুমার, দ্যুতিকুমার, ডালিমকুমার, ঘিকুমার। সবাইকে তো ফেলে গেল। কী হবে এখন? কে হবে চম্পাবতীর বর? সবাইকে অবাক করে দিয়ে মালা পড়ল পাতাকুমারের গলায়। সাথে সাথে ঢাক-ঢোল বেজে উঠল। হাতি পাতাকুমারের গলার কলাপাতার মালা ছিঁড়ে খেতে লাগল। কাঞ্চননগরে খবর গেল। রাজা-প্রজা সবাই খুশি। দাদাভাই দু রাজ্যের রাজাদের ডাকলেন। বললেন, 'আর গোলমাল নয়। বিয়ের আয়োজন করুন। আজ থেকে আপনারা একে অপরের আত্মীয়।'
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল পাতাকুমার আর চম্পাবতীর।