শিকারি বকু মামা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শিকারি বকু মামা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শিকারি বকু মামা | Shikari Baku Mama Bangla Golpo

 


✅ শিকারি বকু মামা

গেলবার বাবার সাথে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। গাছগাছালির ছায়ায় ঢাকা শান্ত গ্রাম। নিরিবিলি পরিবেশ। মজাই আলাদা। একদিন বাবার সাথে হাটে গেলাম। হাট থেকে ফিরে বাড়ির দরজায় ঢুকতেই ভেতরে বেশ হৈ চৈ শুনতে পাচ্ছিলাম। কী ব্যাপার। বাড়ি থেকে বের হবার সময় তো এমন ছিল না। তবে কি নতুন কেউ এল নাকি? দরজা খুলেই মা বললেন, 'দেখ টিপু, কে এসেছে। বললাম, 'কে?' 'তোর ছোট মামা।' বসার ঘরে যেতেই মামা তো হৈ হৈ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, 'বেশ লম্বা হয়েছিস তো রে। বস বস। মামাকে বললাম, 'তোমার মতো এখনও হইনি। মা আজ ভীষণ খুশি। খুশি বাবা আর আমরাও। সেই কবে মামাকে দেখেছি। মামা অনেকদিন পরে এলেন। 

গ্রামের বাড়ির টাটকা সবজি, ফুলজোড় নদীর মাছ এসব দিয়ে খাবার আয়োজন। খাওয়ার সময় মা জিজ্ঞেস করলেন, 'বকু, থাকছিস তো কদিন?' সবার মন খারাপ করে দিয়ে মামা বললেন, 'না, ছোট আপা, থাকার সময় নেই। মা রেগে বললেন, 'কী এমন কাজ শুনি, সব সময় ঘুরে বেড়াস।' মামা বললেন, 'তুমি বুঝতে পারছ না, ছোট আপা। আমাকে যেতেই হবে। চিতাই গ্রামের চেয়ারম্যান নিজে লোক পাঠিয়েছেন। মামার যাবার আয়োজন শেষ। মা মামাকে জিজ্ঞেস করেন, 'চিতাই গ্রামে তোর কী কাজ?' মামা বললেন, 'শোন, আপা, ওই গ্রামে একটা বাঘ এসেছে। শুনেছি বাঘটি ভয়ংকর। দু'তিনটে গরু সাবাড় করে দিয়ে এখন মানুষ ধরার মতলবে আছে। তার আগেই ওকে থামাতে হবে। 

গ্রামের সবাই অবশ্য চেষ্টা করছে। তবে, শেষ পর্যন্ত বকুল চৌধুরী ওরফে এই বকু শিকারিরই ডাক পড়েছে। ভাবছি, এই কাজে ভাগনে পুটুকেও সাথে নেব। মা বললেন, 'দ্যাখ, বকু, এগুলো আমার ভালো লাগে না। তুই পুটুকে নেবার কথা বলছিস কেন?' আপা, ভয় পেয়ো না। আমি ভাগনেকে সাহসী করে গড়ে তুলতে চাই। কিরে পুটু, রাজি তো?' আমি তো এক কথায় রাজি।পরদিনই দু'জন রওনা হলাম। মা বললেন, 'দেখিস ভাই, ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছিস।' মামা বললেন, 'আপা, তোমার ওই এক দোষ। ও তোমার ছেলে, আমারও তো ভাগনে। চিতাই গ্রামে পৌঁছলাম তিনটে নাগাদ। বাইরে একটু শীতের আমেজ। চেয়ারম্যানের বিরাট বাড়ি। 

দেখলাম বকু শিকারিকে দেখার জন্য অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। মামা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, 'আমার ভাগনে পুটু। আমার অ্যাসিস্টেন্ট। মামার এরকম অ্যাসিস্টেন্ট দেখে কেউ কেউ বোধ হয় হতাশ হল। মামা কিন্তু এগুলো নিয়ে কিছু মনে করলেন না। ঘাড় থেকে ব্যাগ নামিয়ে বললেন, চেয়ারম্যান সাহেব, শিকারের জায়গাটা এক্ষুণি দেখতে চাই। চেয়ারম্যান বললেন, 'সে কি স্যার, এত পরিশ্রম করে এলেন; আগে একটু বিশ্রাম নিন। তারপর সব কথা।'মামা না না বলতেই আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, 'আজ থাক, মামা।' ক্ষুধায় আমার পেট তখন চোঁ চোঁ করছিল।

খেতে বসলাম। দেখলাম আয়োজনের কমতি নেই। আমাদের সাথে আরো দু'তিন জন খেতে বসেছিল। বেঁটে ধরনের প্রায় মামার বয়সী একজন বললেন, 'তা, বাঘ মারার অভিজ্ঞতা স্যারের কেমন?' মামা বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, 'তা কি সবাইকে বলতে হবে?' মামার জবাব শুনে লোকটা একটু অপমানিত হল। হেসে বলল, 'না না, এমনিতেই বললাম।' আমার মনে হচ্ছিল কেন যেন মামাকে শিকারি হিসাবে ওর পছন্দ হচ্ছিল না। চেয়ারম্যান সাহেব লোকটাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, 'ওর নাম গুপী, আমার এখানেই থাকে। বনে-বাদাড়ে ঘোরে, খুব সাহসী। আর হ্যাঁ, ও অনেক পশুপাখির ডাক নকল করতে পারে। পরদিন বেলা দু'টো। আমি, মামা, চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির দু'জন লোকসহ বসে বাঘ মারার পরিকল্পনা করলাম। মনে হচ্ছে যেন বড়সড় এক যুদ্ধে যাচ্ছি। 

বনের মধ্যে দু'টো গাছের মাঝখানে শত্রু কাঠের খাঁচা, ওপরে কপিকল। ঠিক তারই নিচে টোপ হিসাবে ছাগল বাঁধা থাকবে। যেই বাঘ ছাগল ধরতে আসবে, অমনি খাঁচাটি কপিকলের সাহায্যে নিচে ছেড়ে দেয়া হবে। যদি বাঘ বাড়াবাড়ি করে তবে গুলি করা হবে। গুলি করবে চেয়ারম্যান বাড়ির ওই দু'জনের একজন। রকিব, আমরা সবাই বসব খাঁচার একটু দূরে। দশ ফুট উঁচু মাচায়। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, 'আপনার কথামতো সব প্রস্তুত আছে।' চেয়ারম্যানের দুই লোক রকিব ও পানু রওনা দিল শিকারের জায়গায়। টোপ হিসেবে যে ছাগলটি ওরা নিয়ে যাচ্ছিল তা খুবই দুর্বল। মনে হল, বাঘের ডাক শুনলেই ওটা জ্ঞান হারাবে।আমি আর মামা সন্ধ্যার দিকে রওনা দিলাম। কারণ বাঘ নাকি গ্রামের পশ্চিম দিকের নদী পেরিয়ে সন্ধ্যার পরই গাঁয়ে হানা দেয়। 

মামা বললেন, 'বাঘ নদী পার হবার আগেই আমরা মাচায় উঠব। তাড়াতাড়ি চল।'গ্রামের শেষ মাথায় এসে পড়েছি। চারপাশে জঙ্গল। মামা আগে, আমি পিছে। মামার কাঁধে ঝোলা। তার মধ্যে কিছু শুকনো খাবার। কারণ বাঘ সন্ধ্যা সাতটায়ও আসতে পারে আবার রাত তিনটেয়ও আসতে পারে। কিছু খেতে তো হবে। এমন সময় হঠাৎ জঞ্জালের ভেতর থেকে বাঘের ডাক। যেন এখনি ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে। মামা বললেন, 'পুট, দে ছুট।' দু'জনে মিলে দিলাম ছুট। কোনোদিক না দেখে সামনে একটা ঘরে ঢুকে পড়লাম। ঘরে ঢুকে দেখি, কটা ছাগল আর একটা গরু বাঁধা। বুকটা তখনও ধক ধক করছিল। কোনো রকমে বসেছি, আবার সেই ডাক।মনে হল এরপর বোধ হয় এই গোয়াল ঘরেই ঢুকবে। মামা ঘরের দরজা আঁটতে গিয়ে গোবরে পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেলেন। ওইভাবে শুয়ে পড়ে দরজা এঁটে ধরলেন। 

বললেন, 'তাড়াতাড়ি হুড়কো লাগা।' আমি অন্ধকারে হাতড়ে গিয়ে মামার পিঠের ওপর পড়ে গেলাম। মামা নিচে আমি মামার পিঠে। মামার বুকের নিচে গোবর। ওভাবে দরজা এঁটে থাকলাম। চুপচাপ পড়ে আছি। একটু পরেই শুনি মামার নাক ডাকার আওয়াজ। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। গরুর হাম্মা রবে ঘুম ভেঙে দেখি, ভোর হয়ে গেছে। মামাকে ডাকলাম। মামা উঠলেন, কিন্তু সারা গায়ে গোবর। আমারও কিছু লেগেছে।রাস্তার পাশের পুকুরে গা ধুয়ে চেয়ারম্যানবাড়ি ঢুকলাম। আমাদের দেখে বাড়ির এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে বললেন, 'আপনারা বিশ্রাম নিন। আমি নাস্তা আনছি। চেয়ারম্যান সাহেব থানায় গেছেন। বাঘ খাঁচায় আটকা পড়েছে তাই জানাতে। 'মামা, বাঘ আটকা পড়েছে?' জিজ্ঞেস করতেই মহিলা বললেন, 'কেন, আপনারা ছিলেন না। 

আমি বললাম, 'হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে, আপনি বলুন। ভদ্রমহিলা বললেন, 'রাত বারোটার দিকে যেই বাঘ এসে ছাগলটা ধরতে যায়, অমনি পানু খাঁচা ফেলে দেয়। বাঘ আটকা পড়ে। বাঘের লাফালাফির চোটে ছাগলটা খাঁচার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওটাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, আপনারা জানেন না?' মামা বললেন, 'আমাদের আর সময় নেই। আমরা চললাম। 'সে কি! সবাই আসুক। তারপর না হয় যাবেন। কে শোনে কার কথা! ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে বড় রাস্তার দিকে হাঁটা দিলাম। তাড়াতাড়ি বাস ধরে বাড়ি ফিরব। বাসে উঠে মামাকে বললাম, 'ঘটনাটা কেমন যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে। 

বাঘ আসল রাত বারোটায়। তাহলে আমরা কিসের ডাকে ভয় পেলাম। এগুলো ঐ গুপী ব্যাটার কান্ড না তো!' মামা বললেন, 'ঠিক তাই। ওই আমাদের বাঘের ডাক নকল করে ভয় দেখিয়েছে। মামাকে বললাম, 'ক'দিন আমাদের বাড়িতে থেকে যাও।' দীর্ঘশ্বাস ফেলে মামা বললেন, 'তাই করবো ভাবছি, এসব শিকার টিকার আর ভালো লাগে না।